ফতোয়ায়ে আরিফ
Fatwa-e-Arif
মানুষ ও জ্বীনের মধ্যে বিয়ে জায়েজ (রিভিউ) / Marriage between jinn and humans is permissible (Review)
প্রবন্ধের মূল বা বিচার্য ভাষাঃ
বাংলা / Bengali
পাবলিস্টঃ ২৫/০২/২০২৫ ইং
আপডেটেডঃ ০৮/০৯/২০২৫ ইং
বিষয় / Subject:
মানবজাতি এবং জ্বীনজাতির মধ্যেকার বিয়ে সম্পাদন, ইসলামের দৃষ্টিতে এটি জায়েজ / It is permissible in Islam to perform marriages between humans and jinn.
বিশেষ বুলেটিন / Special Bulletin:
এ মাসআলাটি আমার নিজ জীবনের সাথে সম্পৃক্ত (মানে আমার শরীরে একজন মুমেনা জ্বীন থাকে বলে আমি ও আমার এলাকাবাসী প্রায় নিশ্চিত) বিধায়, কেউ এই মনে করবেন না যে, আমি পরী বিয়ে করতে চাই, তাই মাসআলাটি আমি ইচ্ছে করে বা আবেগ প্রবন হয়ে পজেটিভলি বা হ্যাঁ বোধক লিখেছি। এটি একটি ইসলামী ফতোয়া। ফতোয়া কখনো স্বার্থকেন্দ্রীক হতে পারে না। যেহেতু এটি একটি রিভিউ ফতোয়া; তাই আমি চাই যে, আপনারা এ মাসআলায়, হয় সমর্থন দিবেন, না হয় বিরোধিতা করবেন। যাতে মানুষ সত্য কোনটি তা সহজে বুঝতে পায়।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ / Statutory Warning:
আপাতদৃষ্টিতে আমার অনেকগুলো কর্ম বা ফতোয়া প্রদান আপনাদের কাছে খারাপ মনে হবে বা হতে পারে, তবুও এ কর্মগুলো কেন আমার রব সরাসরি নিষেধ করেননি, বা কী রহস্য লুকিয়ে আছে এতে, এবং কেন করেছেন; এ দু'য়ের মাঝে মানুষের কী উপকারীতা বা কী অপকারীতা রয়েছে; মূলত আমি তা বুঝতে চেষ্টা করছি বা করেছি এবং ভবিষ্যতেও হয়তো এভাবেই আমি বুঝতে চেষ্টা করবো। তাই, আপনাদের অনেকে আমার এ ধরনের কর্ম বা ফতোয়া প্রদানের বিষয়টি হয়তো নাও বুঝতে পারেন। আমি মনেকরি, আদেশের সাথে সাথে মান্য করা, এটা উচ্চতর ঈমান, কিন্তু এর বিপরীতে ঐ আদেশের কারণ জানা থাকলে, সেটা আরো উচ্চতর ঈমান! এবং আমার মতে, এভাবে আমার ঈমান আরো দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হবে ইনশা'আল্লাহ!
তাই প্লিজ আমাকে কেউ অসৎ বা আল্লাহবিমুখ বা আল্লাহর দুশমন ভাববেন না! ইনশা'আল্লাহ আসলে আমি আল্লাহর বন্ধু ছাড়া আর কেউ নই!
দৃষ্টি আকর্ষণ / Attention:
'ফতোয়ায়ে আরিফ' কিতাবের মাসআলা হিসেবে এর বিষয়ের মধ্যেকার কোনরূপ সংশোধনী আছে কিনা, এ উদ্দেশ্যে এর ২য় ধাপের অফলাইন মিটিংয়ের এজেন্ডা চূড়ান্ত করণের লক্ষ্যে, এ বিষয়ের উপর নিম্নে উল্লেখিত এর সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা অনুযায়ী আপনাদের পরামর্শ আহবান।
১। মাসআলা নং (প্রকাশ)-
২
২। মাসআলা নং (কিতাব)-
&
৩। পাঠের নামঃ
মানুষের সাথে জ্বীনের বিয়ে
[মানুষ ও জ্বীনের মধ্যে বিয়ে জায়েজ (রিভিউ), পোস্টটি সম্পর্কে মন্তব্য করার জন্য অনুরোধ রইলো]
৪। পরিচিতি নং:
#.*.১.২.&
৫। প্রশ্ন/মাসআলাঃ
মানবজাতির কারো সাথে জ্বীনজাতির কোন সদস্যের বিয়ে বৈধ বা জায়েজ হবে কিনা?
[ মানুষ ও জ্বীনের মধ্যে বিয়ে জায়েজ (রিভিউ), পোস্টটি সম্পর্কে মন্তব্য করার জন্য অনুরোধ রইলো]
৬। উত্তর/সমাধান/রায়/হুকুমঃ
আসলে এ প্রশ্নটি এমন একটি প্রশ্ন, যার উত্তর একটু ব্যাখা করে না লিখলে তা বুঝানো যাবে বলে মনে হয় না এবং দু'চার কথায় এর উত্তর দিলে, তবে এর পরিপূর্ণ উত্তর হয়তো দেয়াও যাবে না। তাই এ প্রশ্নটির উত্তর একটু ব্যাখা করে লিখছি।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এঁর জিবদ্দশাতেও জ্বীন জাতি ছিলো।
কিন্তু তিনি নিজে এ কাজটি করে দেখাননি বা এ বিষয়ে তাঁর সমর্থনের বিষয়েও কিছু বলেননি। এমনকি তাঁর পরবর্তীতে তাঁর সাহাবীগণও এ কাজটি করেননি।
বরং বড় বড় কামেল ঈমামগণ একে অনুৎসাহিত করেছেন এবং প্রায় সবাই এ বিষয়টিকে নাজায়েজও বলেছেন। তাই এ বিষয়ে সাধারণের বেহুদা প্রশ্ন করা, কখনো উচিৎ হবে না।
কিন্তু বিয়ের বিষয়ে যতগুলো কোরআনের আয়াত ও হাদীসের বাণী রয়েছে, এর একটিতেও জ্বীনকে বিয়ে করা যাবে না, এ কথা কোথাও নেই। থাকলে আপনারা কমেন্টস এর মধ্যে তা উল্লেখ করবেন, আমি এটিই চাই।
আমাদের সকলের নবী (সাঃ), মানব ও জ্বীন, এ উভয় জাতির নবী (সাঃ), সকল সৃষ্টির নবী (সাঃ), বিশ্বনবী (সাঃ), আখেরী নবী (সাঃ), কোন কাজ না করলে বা সমর্থন দিয়ে না গেলে বা স্থান, কাল, পাত্র অনুযায়ী অনুপযুক্ত হওয়ার কারণে বা অন্য যে কোন হেকমতের কারণে, বা তখনকার সময়ের জন্য আল্লাহু তা'য়লা কর্তৃক নির্দিষ্ট বা অনুমোদিত না হওয়ার কারণে তিনি (সাঃ), কাজটি করতে না পারলে; তাহলে তাঁর ইন্তেকালের পরবর্তী সময়ে, তা যে নাজায়েজ বা হারাম হবে, বা হতে পারবে; ইসলামী শরীয়তে, মানে শরিয়তে মোহাম্মদীতে (সাঃ), এ কথার কোন ভিত্তি নেই।
ইসলামী শরীয়তে কোন কিছু হারাম হতে হলে, তা অবশ্যই, কোরআনের আয়াত দ্বারা সরাসরি নিষিদ্ধ হতে হয়; অথবা বিষয়টি ফরজের বিপরীত হতে হয়। আবার, মাকরূহে তাহরীমী বলতে হলেও, বিষয়টি কোরআনের আয়াত দ্বারা নিষিদ্ধ, এ বিষয়টি প্রমাণিত হতে হয়; অথবা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এঁর সুন্নাতে জিন্দিগী দিয়ে তা প্রমাণিত হতে হয়। অপরদিকে যেহেতু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর সারা জীবনেও কাজটি করেননি, তাই একে সুন্নাতের বিপরীত, এ কথা বলারও কোন সুযোগ নেই।
যেহেতু এ বিষয়ে কোরআন ও হাদীসে সরাসরি হ্যাঁ-না, কিছুই নেই।
আবার বিষয়টি যদি, মানুষ ও জ্বীনের জন্য আবশ্যক বা সকলের জন্য প্রয়োজনীয়ই হতো তাহলে অন্তত নিজে (সাঃ) না করলেও সাহাবীদেরকে (রাঃ) দিয়ে হলেও বিষয়টি সমর্থন দিয়ে যাবেন অথবা ভবিষ্যতের জন্য হলেও ইঙ্গিত দিয়ে যাবেন, এটিই স্বাভাবিক ছিলো। যেহেতু তিনি (সাঃ) প্রকাশ্যে এ বিষয়ে কিছু বলেননি বা সমর্থনও দেননি, তাই আম জনতার জন্য এটি জরুরী বা প্রয়োজনীয় কোন বিষয় নয় বলেই প্রমাণিত।
অন্যদিকে যেখানে বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রয়োজনীয় মনে করলেন না, সাহাবীগণ (রাঃ) প্রয়োজনীয় মনে করলেন না, তাবেঈন, তবে তাবেঈন, খোলাফায়ে রাসেদা, কেউ প্রয়োজনীয় মনে করলেন না। ইসলামের চার মাযহাবের মধ্যেকার ৩ মাযহাবের ঈমামগণ যেখানে স্পষ্ট করে এ বিষয়টিকে অনুৎসাহিত করলেন এবং অনেক আলেম হারাম বা মাকরূহে তাহরীমী হিসেবেই সাব্যস্ত করলেন, শুধু ঈমাম শাফেয়ী (রহঃ) এঁর মাযহাবের ঈমামগণ বিষয়টিকে জায়েজ বললেন। যেমন, শাফেয়ী ঈমামের কিতাব থেকেই আমি লিখছি, আপনারা পড়ুন-
"জিন'কে বিয়ের আহকাম"
ইমাম শামসুদ্দীন রামলী (১০০৪ হি.) বলেনঃ
أي فيجوز للآدمي نكاح الجنية وعكسه.
মানুষের জন্য জিন্নি (মহিলা জিন) এর সাথে বিবাহ করা এবং বিপরীতভাবে (পুরুষ জিন কর্তৃক মহিলাকে বিবাহ করা) জায়েজ।
أحكام النكاح للإنسي منهما فينتقض
আর তাদের উভয়ের (মানুষ ও জিন) ক্ষেত্রে বিবাহের বিধানাবলী প্রমাণিত, সুতরাং জিন্নির স্পর্শে মানুষের ওযু ভঙ্গ হবে।
ومنه أنه يجب عليه أن ينفق عليها ما ينفقه على الآدمية لو كانت زوجة.
স্বামীর উপর আবশ্যক হল যে, সে জিন্নি উপর সেই পরিমাণ খরচ করবে যা সে মানুষ স্ত্রীর উপর করত যদি স্ত্রী মানুষ হত।
وأما الجني منهما فلا يقضى عليه بأحكامنا.
তবে জিন'দের মধ্য থেকে কেউ যদি (মানুষের সাথে বিবাহিত হয়) তবে তাদের (জিনদের) উপর আমাদের বিধানাবলী প্রয়োগ করা যাবে না।]
📚 [নিহায়াতুল মুহতাজ ইলা শারহিল মিনহাজ, রামলী ৬/২৭১ ]
📝 নোট : ৪ মাযহাবের মধ্যে শুধু শাফেয়ী মাযহাবের জিন বিয়ে জায়েজ এবং হাম্বলীদের মধ্যে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (৭২৮ হি.) এটিকে জায়েজ বলেছেন, কিন্তু এটি হাম্বলী মাযহাবের মুতামাদ নয়।
🖋️ Md. Nur Habib
তাহলে অবশ্যই এটি সাধারণ জনতার জন্য নয়।
আবার আপনার প্রয়োজন কী এতে? তার উপর আপনি জ্বীনকে পাবেন কোথায় (?), সে তো থাকে ধরা-ছোঁয়ার বাহিরে, অদৃশ্য ভাবে। তাহলে আপনার জন্য এ প্রশ্নটি আসবে কেন?
তবে কথাগুলো জ্বীনকে বিয়ে করা নাজায়েজ, এ বিষয়ের প্রতি সম্পৃক্ত নয়! পরী নিজ থেকে কারো শরীরে আসর বা সাহর না করার অথবা মহিলা জ্বীন নিজ থেকে বিয়ে করতে না চাওয়ার পরেও তাকে বিয়ে করতে চেয়ে বা জ্বীনের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চেয়ে বেহুদা সময় নষ্ট করা, রিক্স বহন করার বা ধৈর্য-সহ্য করার সে হিম্মত বা সে রকম ত্যাগ স্বীকার করার যোগ্যতা না হওয়ার বা না থাকার পরেও অথবা জ্বীন জাতের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের সে রকম উপযোগিতা বা চাহিদা বা সহীহ্ নিয়ত না থাকা শর্তেও; এ বিষয়ে অপ্রয়োজনে জীবনের মূল্যবান সময় অপচয় বা ব্যয় না করার সাথে সম্পর্কিত।
হ্যাঁ, এ জন্যেই আমি উপরের এ কথা গুলো লিখেছি। না হয়, জ্বীনের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে না; বা এটি নাজায়েজ বা হারাম হবে বা হতে পারে; পবিত্র কোরআন-হাদীস থেকে এ বিধানের কোন ভিত্তি নেই।
আপনারা একটু চিন্তা করুন, প্রায় সকল মুসলমানই বিশ্বাস করে, মহিলা জ্বীন একজন সুদর্শনা প্রেমময়ী নারীর বেসে, পুরুষ মানুষের নিকট তার পাশে ওপেন হতে পারে এবং প্রেম বিনিময় করতে পারে। আবার আপনারা এও বিশ্বাস করেন, প্রকাশ্য পরীর প্রেমে বা তার সংস্পর্শে একজন পূরুষ মানুষের ওজু যাবে এবং পরীর সাথে সহবাস, এও সম্ভব। হ্যাঁ, পবিত্র কোরআন হাদীস অনুযায়ী সম্ভব হওয়ার যুক্তি বা সাপোর্ট আছে বলেই মানুষেরা এ রকম বিশ্বাস করে।
আবার যদি এ রকম নাই'ই হতো, তাহলে মানুষের মাঝে এ রকম বিশ্বাস আসে কোত্থেকে? নিশ্চয়ই জ্বীন জাতি মানব রূপে, মানুষের প্রকৃতিতে, মানুষের পাশে, মানুষের সকল গুণাগুণ নিয়ে প্রকাশ্যে অবস্থান করতে পারে। নতুবা শুধু গুগল, ফেসবুক আর ইউটিউবের সার্চ লিস্ট দেখলেই বুঝা যাবে, মানুষ কি পরিমাণে বিষয়টি বিশ্বাস করে!
তাহলে জ্বীন এবং মানুষ, পারষ্পরিক একসাথে অবস্থান করলে যদি এ রকম আকর্ষণ ও গুণাগুণ ধর্মী বৈশিষ্ট্যই থেকে থাকে; এ রকম প্রাকৃতিক পারষ্পরিক উপযোগিতা ও চাহিদা দিয়েই যদি মহান রব মানুষ ও জ্বীন, এ উভয় জাতিকে সৃষ্টি করেন; এছাড়া মহান রব তাদের একজনকে আরেক জনের সাথে থাকারও যদি যোগ্যতা বা তাওফিক দেন এবং তাদের উভয়কে উভয়ের সাথে থাকার অবস্থাও যদি সৃষ্টি করেন; তাহলে তাদের পারষ্পরিক মিলন ঘটানোর কোন বৈধ ব্যবস্থা রাখবেন না, এটা হতে পারে না!
এ বিষয়ে আল কোরআন বলছে-
সেখানে থাকবে স্বামীর প্রতি দৃষ্টি সীমিতকারী মহিলাগণ, যাদেরকে ইতঃপূর্বে স্পর্শ করেনি কোন মানুষ আর না কোন জ্বীন।
এছাড়া জ্বীনেরা মানুষের মত মানুষের আকৃতি-প্রকৃতিতে দুনিয়ার জমিনে মানুষের পাশে প্রকাশ্যে প্রকাশ হতে বা আসতে পারে কিনা, এ বিষয়টির প্রমাণের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত হাদীসটিই এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
যেমন, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রমজান মাসে রাসুল (স.) আমাকে জাকাতের সম্পদ পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তখন দেখতে পেলাম এক আগন্তুক সদকার মাল চুরি করছে। তখন আমি তার হাত ধরে ফেললাম এবং বললাম- আল্লাহর কসম, আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুলের কাছে নিয়ে যাব। তখন আগন্তুক বলল, আমি খুব অভাবী আর আমার অনেক প্রয়োজন। তার এ কথা শুনে দয়া করে তাকে ছেড়ে দিলাম।
পরদিন সকালে রাসুল (স.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, গতকাল তোমার অপরাধী কী করেছে? আমি উত্তর দিলাম, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ), লোকটি নাকি অনেক অভাবী তাই তাকে দয়া করে ছেড়ে দিয়েছি। রাসুল (স.) বললেন, অবশ্যই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবার আসবে। পরদিন আমি আবার অপেক্ষা করতে লাগলাম। যখন সে আবারও চুরি করতে আসল, তখন তাকে পাকড়াও করে বললাম, এবার অবশ্যই আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) কাছে নিয়ে যাব। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি খুব অভাবী, আমার পরিবার আছে, আমি আর আসব না। আমি তাকে দয়া করে এবারও ছেড়ে দিলাম।
পরদিন আবারও রাসুল (স.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, গতকাল তোমার অপরাধী কী করেছে? আমি এবারও উত্তর দিলাম, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ), লোকটি নাকি অনেক অভাবী— তাই তাকে দয়া করে ছেড়ে দিয়েছি। রাসুল (স.) এবারও বললেন, অবশ্যই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে, আর সে আবার আসবে। তৃতীয় দিনও আমি চোরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। যখন সে আবারও চুরি করতে আসল, তখন তাকে পাকড়াও করে বললাম, এবার অবশ্যই আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) কাছে নিয়ে যাব, তুমি বার বার প্রতিশ্রুতি করেও চুরি করতে এসে থাকো। তখন (অবস্থা বেগতিক দেখে) সে বলল, আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি তোমাকে এমন কিছু কথা জানাবো— যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দান করবেন। আমি বললাম, সেগুলো কী? তখন সে বলল, যখন ঘুমাতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমাবে তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন পাহারাদার নিযুক্ত করবেন, যিনি তোমার সঙ্গে থাকবেন। আর কোনো শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে আসতে পারবে না। এটা শুনে আবু হুরায়রা (রা.) তাকে ছেড়ে দিলেন।
পরদিন রাসুল (স.) আবার অপরাধীর কথা জানতে চাইলে তিনি আগের রাতের কথা বললেন। তখন রাসুল (স.) বললেন, যদিও সে চরম মিথ্যাবাদী কিন্তু সে সত্য বলেছে। রাসুল (স.) আবু হুরায়রা (রা.)-কে আরও বললেন, তুমি কি জান সে কে? আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, না। রাসুল (স.) আবু হুরায়রাকে (রাঃ) বললেন, সে ছিল শয়তান। (সহিহ বুখারি: ২৩১১)
উপরোক্ত কোরআন ও হাদীস দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, জ্বীনের সাথে মানুষের সহবাস, মানুষের মতই সম্ভব। সম্ভব যদি নাই হতো, তাহলে সূরা আর রহমানের উপরোক্ত আয়াতের মধ্যে বেহেশতী রমনীদের বর্ণনায় মহান রব সহবাসের বিষয়ে এভাবে মানুষ ও জ্বীনকে একসাথে সম্পৃক্ত করতেন না।
আর সহবাস যদি সম্ভব হয়, তাহলে প্রেম-প্রীতীতো অবশ্যই সম্ভব।
তবে এ বিষয়ে অজ্ঞতার একটি কারণ হলো, জ্বীনকে মানুষের বেসে এবং ওপেন ভাবে সাধারণত দেখতে পাওয়া যায় না। তাছাড়া জ্বীন শুন্যেও মিলিয়ে থাকতে পারে, এবং অন্যান্য বিভিন্ন রূপেও থাকতে পারে। তাই জ্ঞানের অভাবে হোক, বা অবিশ্বাসের কারণে হোক; একদল মানুষ মনে করে জ্বীন এক রকম প্রাণী, আর মানুষ আরেক রকম প্রাণী; তাই জ্বীনের সাথে সহবাস, এটা সম্ভবই না; যেমন কুকুর-বিড়ালের সাথে মানুষের বিয়ে সম্ভব নয়। অন্যদিকে আরেকদল মানুষ মনে করে, জ্বীনের সাথে মানুষের সহবাস সম্ভব হলেও, জ্বীন বহুরূপী হওয়ার কারণে এবং এতে মানুষের সমূহ কষ্টের দিক বিবেচনা করে ও সাহাবী (রাঃ) ও বুজর্গ গণের মধ্যে কেউ জ্বীন বিয়ে না করায়, তারা জ্বীনকে বিয়ে করা নাজায়েজ বা হারাম মনে করেন।
কিন্তু একজন মুসলমান হিসেবে আমাদেরকে কোনকিছু আমল করতে যেমন, কোরআন-হাদীসের জ্ঞান অনুযায়ী আমল করার বিষয়ে বলতে হয়; ঠিক তেমনি, কোন কাজকে বা কোনকিছুকে না মানতেও, কোরআন হাদীসের নিষেধাজ্ঞা আছে কিনা বা কোরআন হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী সম্ভব হতে পারে কিনা, তা দেখেই, সংশ্লিষ্ট কাজটি আমলে পরিণত করা যাবে কি যাবে না, এ বিষয়টি ঠিক করতে হয়।
তাহলে উপরের বর্ণনা অনুযায়ী, কোরআন হাদীস মোতাবেক জ্বীনের সাথে মানুষের সহবাস এবং বিয়ে সম্ভব বলেই প্রমাণিত হয়।
তাহলে, আমার রব এতোটা নিষ্ঠুর নয় যে, তেতুলকে সামনে দিবেন, মিষ্টিকে সামনে দিবেন, চা-কপি সামনে রাখবেন; অথচ মানুষ বা জ্বীনকে তাদের জীব্হা, মন ও ব্রেনকে কষ্ট দিবেন; এগুলো খাওয়াকে নাজায়েজ করবেন, এটা হতে পারেনা।
আমার রবকে এতো নিষ্ঠুর আমি মনে করি না। তাই রব যদি যৌক্তিক, ভালোবাসা আর দয়াময় হয়, তাহলে অবশ্যই তিনি জ্বীনের সাথে মানুষের বিয়ে জায়েজ করবেন।
আচ্ছা বলুনতো, মানুষ এবং জ্বীনকে যদি পাশাপাশি থাকার যোগ্যতা দিয়ে থাকেন এবং যদি তাদেরকে একত্রে অবস্থান করান ও এ কারণে যদি উভয়ের পেটের ভিতর মলের সৃষ্টি করেন (রূপক অর্থে) ও এতে যদি এর বেগ হয়, তাহলে সত্যিকার রব কি কখনো টয়লেটে যাওয়াকে হারাম করতে পারেন? পারেন না।
কারণ তিনি মলের সৃষ্টিও করবেন, আবার টয়লেটে যাওয়াও হারাম করবেন, এটা হতেই পারে না। নাকের শ্লেষা সৃষ্টি করবেন, অথচ তা ফেলা নিষেধ, এ কথা বলবেন; এটা কখনো যৌক্তিক হতে পারে না।
সহীহ বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "আল্লাহ তায়ালা এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি" (ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত, ৫২৭৬ নং হাদীস)
আর তাই, জ্বীন যার কাছে নিজ থেকে আসবে বা সে যদি এ বিষয়ে প্রকৃতই এবং স্বাধীন ভাবে যদি রাজি থাকে; তাহলে তখন পারষ্পরিক প্রয়োজনীয়তার আলোকে, তাদের মধ্যকার বিয়ের বিষয়টি বিবেচ্য হতে পারে।
কিন্তু এরপরও এখানে একটি প্রশ্ন থেকেই যায়, আল-কোরআন ও আল-হাদীসে বিষয়টিকে সরাসরি বা স্পষ্ট করে হারাম বা নাজায়েজ হিসেবে সাব্যস্ত বা উল্লেখ করা হয়নি কেন?
তাহলে বুঝা যায়, বিষয়টিতে রয়েছে কোন না কোন রহস্য।
এবং এও বোঝা যায় ভবিষ্যত জীবনে ২/১ জন ব্যক্তির জীবনে হলেও বিষয়টি ঘটমান হতে পারে। না হয় আল্লাহু তা'য়ালা ও তাঁর রাসূল (সাঃ) এতো কিছু ব্যক্ত করলেন; আর এ বিষয়টির বিষয়ে কেন হ্যাঁ-না কিছু বলবেন না?
অথচ বললেন, তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দেয়া হয়েছে এবং এও বললেন ইসলাম সহজ ধর্ম।
এ বিষয়ে তাঁদের চুপ থাকা এবং স্পষ্ট করে কিছু না বলার কারণে, এও প্রমাণিত হয় যে, বিষয়টি আসলে জায়েজ। না হয় বিষয়টির বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা না থাকা বা চুপ থাকার কোন মানে নেই। বা ইসলাম পরিপূর্ণ ধর্ম বা সহজ ধর্ম এসব ঘোষণার কোন মানে নাই।
তাহলে ইহা সুস্পষ্ট যে, যেহেতু জ্বীন প্রকাশ্যে মানুষের সংস্পর্শে মানুষের আকারে আসতে পারে এবং উভয়ের মধ্যেকার স্বাভাবিক ভাবে প্রেম প্রীতীর উদ্রেক করতে পারে ও তাদের মধ্যে সহবাস সম্পন্ন করতে পারে; তাহলে অবশ্যই মানুষ ও জ্বীনের মধ্যেকার বিয়ের একটা বৈধ তরীকা থাকবে। এবং থাকতে হবে। নতুবা আমার রব অসত্য, জটিল, দয়াহীন আর অযুক্তিক হয়ে যাচ্ছেন না!? (নাউজুবিল্লাহ)
সুতরাং কোরআন ও হাদীস অনুসারে এবং সে অনুযায়ী যুক্তিবলে আমার বৈচারিক বিশ্লেষণ এই যে; জ্বীন জাতির সাথে, মানব জাতির বিয়ে জায়েজ হবে এবং হতেই হবে।
দেখুন, আমি আপনাদেরকে বলতে চাই, মানুষ এবং জ্বীন, এ দু'জাতই আল্লাহর সৃষ্টি! তাই, আল্লাহ'ই ভালো জানেন কার সাথে তিনি তার সৃষ্ট জীবের বিয়ে সাব্যস্ত করবেন। কথার কথা তিনি যদি গরু-ছাগলের সাথেও মানুষের বিয়ে সাব্যস্ত করেন বা করতেন, তবে বিনা বাক্যে এবং সাথে সাথে আমাদেরকে তা মেনে নিতে হতো! যেহেতু বান্দা যার, সিদ্ধান্তও হবে তার! তাছাড়া আল্লাহর জ্ঞান, উদ্দেশ্য ও হেকমত মানুষের বোঝার কথাও না। যেহেতু আল্লাহ মানুষকে খুব সামান্যতম জ্ঞান দিয়েছেন। তাই নিজের জ্ঞান অনুযায়ী ফতোয়া দেয়ার অধিকার কোন মানুষের নাই। সুতরাং কোরআন-সুন্নায় যেখানে স্পষ্ট করে এটিকে নাজায়েজ হিসেবে নির্ণীত করেনি; সেখানে আমরা মানুষেরা, এটিকে নাজায়েজ বলতে পারিনা।
আপাত দৃষ্টিতে মানুষের বিবেক অনুযায়ী যদিও মনে হয় যে, জ্বীনের সাথে মানুষের বিয়ে হলে হয়তো উভয় জাতিই ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
কিন্তু ইসলামী শরিয়তে, হারাম এবং মাকরূহে তাহরীমী সাব্যস্ত হতে পারে বা হয় একমাত্র কোরআনের আয়াতের প্রমাণের প্রেক্ষিতে। মানুষের জ্ঞান-গরীমা বা বিবেক দিয়ে নয়। মানুষ আকাশে চড়তে পারে, সমুদ্র তলদেশে যেতে পারে, আরো কত কি করতে পারে! কিন্তু শরিয়তের বিধান বা মানুষ ও জ্বীনের কোন কর্ম হারাম কিনা বা মাকরূহে তাহরীমী কিনা; এসব বিষয়ে কোনরূপ ফতোয়া বলতে পারে না। এ অধিকার তার নেই। তাই কোরআন-হাদীসে নিষেধাজ্ঞা না থাকলে, তা মানুষের জন্য নিষেধ হতে পারে না।
তাহলে, জ্বীন এক সত্ত্বা, মানুষ আরেক সত্ত্বা; এক জাতীর সাথে আরেক জাতীর বিয়ে হতে পারে না; অন্তত ফতোয়ার বিষয়ে মানুষের বিবেক নির্ভর এ জাতীয় কথা গুলোর অবতারণা কেন? এটাতো জানা কথা যে, পবিত্র কোরআন শরীফে বর্ণীত এসব বিধান সমূহ জ্বীন জাতি ও মানব জাতি, এ উভয় জাতির জন্যেই!
তাহলে, কোরআনের বিধান এবং নছীহতের ক্ষেত্রে জ্বীন এবং মানুষকে ভিন্ন ভাবে দেখার সুযোগ কই? আল কোরআন, এটি কি মানুষ ও জ্বীন, উভয় জাতীর জন্য নয়?
কোরআন কর্তৃক প্রদত্ত বিয়ের নছিহত ও বিধানাবলী কি উভয় জাতীর জন্য হবে না!? তাহলে আপনারা পৃথক করবেন কেন? তাই উপরোক্ত আয়াত দ্বয়ে 'তোমাদের' বলতে, শুধু মানুষকে বোঝানো হবে কেন? অথবা মানুষ এবং জ্বীনকে আলাদা আলাদা বোঝানো হবে কেন? কোরআনের হুকুম বা নছিহতটি যদি উভয় জাতির জন্য একসাথেই হয়, তাহলে এ হুকুমটি শুধু মানুষের জন্য কী করে হয়? পবিত্র কোরআনের অন্যান্য হুকুম, যেমন- আমি তোমাদের মধ্য হতে একজন উম্মী নবী প্রেরণ করেছি (সূরা জুমআ, আয়াত ২); এখানে তোমাদের বলতে যদি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে, উভয় জাতির নবী হিসেবে সাব্যস্ত করা যায়; তাহলে সূরা নিসা বা রুমের আয়াতে উল্লেখিত 'তোমাদের' বলতে শুধু একজাতিকে বোঝাবে কেন? অতএব, এ আয়াতদ্বয়ের হুকুম দ্বারা মানুষের সাথে জ্বীনের বিয়ে নাজায়েজ হতে পারে না। তাছাড়া জ্বীনের সাথে মানুষের বিয়ে যদি একেবারে নাজায়েজই হতো, তাহলে বিয়ের জন্য সূরা নিসায়, মানুষের ১৪টি সম্পর্ককে নাজায়েজ বা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে; কিন্তু জ্বীনের সাথে মানুষের বিয়েকে নাজায়েজ বা হারাম ঘোষণা করা হয়নি। বিষয়টি কি এমন যে, যেগুলো ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলোর চাইতে এ বিষয়টি একেবারেই কম গুরুত্বপূর্ণ!?
আল্লাহু তা'য়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন-
আর তোমাদের কী হল যে তোমরা তা থেকে আহার করো না, যার উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়েছে! অথচ তিনি তোমাদের জন্য বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন, যা তোমাদের উপর হারাম করেছেন। তবে যার প্রতি তোমরা বাধ্য হয়েছ এবং নিশ্চয় অনেকে না জেনে তাদের খেয়াল-খুশি দ্বারা পথভ্রষ্ট করে। নিশ্চয় তোমার রব সীমালঙ্ঘনকারীদের সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত।
উপরের আয়াত দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায় যে, মানুষের জন্য যে সব কর্ম হারাম হবে, এর সব কিছুই পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এও বুঝা যায় এর বাইরে অন্য কোন কর্মকে হারাম সাব্যস্ত করা, এটা মানুষের নিজস্ব খেয়াল খুশী দ্বারা সীমা লঙ্ঘন বা বাড়াবাড়ি বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আল্লাহু তায়ালা অন্যত্র বলছেন-
আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) কোন নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।
তাহলে এটি পরিষ্কার যে, জ্বীনের সাথে আপনি বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হবেন কি হবেন না, তা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার; কিন্তু হারাম বা মাকরূহে তাহরীমী বলার সুযোগ বা অধিকার কই?
যেখানে আপনি যদি হারাম বলেন, তাহলে ভিক্টিম যদি এ হারামকে অবজ্ঞা করে ও তা আমল করে, তাহলে ঐ ভিক্টিমের ঈমান চলে যাবে এবং সে কাফের হয়ে যাবে। এ অবস্থায় ভিক্টিমের বউ তালাক হয়ে যাবে। কারণ কাফেরের সাথে কোন মুমেনার বিয়ে হতে বা থাকতে পারে না। তাহলে এতো বড় একটা জঘন্য ফতোয়া, যা কোরআনে নেই, মানে যার উপর আমাদের অধিকার নেই, তা আমরা কিভাবে দেবো?
আবার বিয়েতে কূফূ বা সমতা মেনে চলার হাদীস অনুযায়ী, জ্বীনের সাথে মানুষের বিয়েকে বড় জোর মাকরূহে তানযীহী বলা যেতে পারে। এ হাদীস দ্বারাও হারাম বা মাকরূহে তাহরীমী সাব্যস্ত করা সম্ভব নয়।
অপরদিকে মানুষের সাথে জ্বীনের বিয়েকে আলকোরআন সরাসরি যেমন না বলেনি, তেমনি হ্যাঁও বলেনি।
এ বিষয়ে যেহেতু, ইসলামী আইনের মূলনীতি অনুযায়ী, যদি কোনোকিছু স্পষ্ট করে 'না' বলা না হয় বা নিষিদ্ধ করা না হয়, তবে সেটি সাধারণত বৈধ বা 'হ্যাঁ' হিসেবে বিবেচিত হয়।
অতএব, জ্বীনের সাথে মানুষের বিয়ের এ বিষয়টিকে সরাসরি হারাম বা মাকরূহে তাহরীমী সাব্যস্ত করার জন্য, কোরআন ও হাদীস থেকে কোন সূত্র বা সনদ খুঁজে পাওয়া যায় না।
তাই আমাদের কেয়াস অনুযায়ী, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) যেখানে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা দেননি, আমি বা আমরাও সেখানে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারি না!
মনে রাখা উচিৎ, কোন কিছু করতে বলার চাইতে, নিষেধাজ্ঞা প্রদান না করার, গ্রহণ যোগ্যতা বেশী। যেমন, আজকের আলোচ্য বিষয়ে, পবিত্র কোরআন ও হাদীসে, বিয়ে জায়েজ, এ কথার গ্রহণ যোগ্যতার ক্ষেত্রে বা এর স্বপক্ষে বিষয়টি স্পষ্ট করে বলার গ্রহণযোগ্যতার মান যদি ১০০% হয়, তবে বিষয়টি স্পষ্ট করে না বলার গ্রহণযোগ্যতার মান কমপক্ষে ১২০% বা তারও অনেক উপরে। যে বিষয়ে আগেও বলা হয়েছে। যেহেতু মানুষ ও জ্বীনের যাবতীয় বিষয়ে ইসলাম পরিপূর্ণ সমাধান দিয়েছে। মানে ইসলাম পরিপূর্ণ দ্বীন বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
তাই চুপ থাকার বা নিষেধাজ্ঞা না থাকার মানেই হচ্ছে, উত্তর হ্যাঁ বোধক হবে বা হতে পারবে, এ জন্যে।
তবে সাধারণত জ্বীন যেহেতু অদৃশ্য থাকে, এবং বিয়ে যেহেতু জোর যবরদস্তির কাজ বা ছেলেখেলা নয়; তাই জ্বীন যদি নিজ থেকে রাজী ও খুশি থাকে এবং বিয়ের সমস্ত শর্ত ও স্বামীকে শতভাগ মেনে চলতে রাজী থাকে, এবং উভয় পক্ষই যদি (মানুষ ও জ্বীন) তাদের পারষ্পরিক শর্ত সমূহ শতভাগ মেনে নেয়; তবে সে হিসেবে এবং কেয়াসের ভিত্তিতে বলা যায় যে-,
জ্বী, ইসলামের দৃষ্টিতে এটি জায়েজ।
প্রসঙ্গত এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করা আবশ্যক মনে করছি। ঈমাম শাফেয়ী (রহঃ) জ্বীনের সাথে মানুষের বিয়েকে জায়েজ ও হালাল বলেছেন। যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও ইসলামে গ্রহণযোগ্য অন্য তিন মাযহাবে এটি নাজায়েজ হিসেবে রয়েছে। অনেকে এটিকে হারাম হিসেবে ফতোয়া দিচ্ছেন!
একই কর্মকে কেউ হারাম বলবেন! আর কেউ হালাল বলবেন!!?? কেউবা জায়েজ বা জায়েজ তরীকা বলবেন! আবার কেউবা এভাবে করাকে বা বিষয়টিকে হারাম বা মাকরূহে তাহরীমীই সাব্যস্ত করবেন!!??
কী জঘন্য ব্যাপার বলুনতো!? যে কাজটি করলে একদল আলেম বলছেন, হালাল ও জায়েজ হবে; সে কাজটি করলেই অন্য আরেকদল আলেম বলছেন হারাম হবে এবং অবজ্ঞা করে করলে ঈমানহারা বা কাফের হবে!
এ পরিস্থিতিতে সূরা আননিসায় আল্লাহু তা'য়ালা বলেন-
সুতরাং, মানব বর ও জ্বীন কনের (বা বিপরীত ভাবে) পারষ্পরিক হ্যাঁ বোধক সম্মতি সূচক জবাব, যা স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে ব্যক্ত করা এবং স্বাক্ষীগণ তা স্পষ্ট করে বুঝতে পারা, বরকে কনের ভরণ-পোষণ ও নিরাপত্তার দায়ভার গ্রহণ করা ও এ বিষয়ে সে সামর্থবান হওয়া, কুফু রক্ষা করা, মানে পরীকে মানব আকৃতিতে ফিজিক্যালী থাকা, তার মানে স্বামী যখনই চাইবে ও যতক্ষণ চাইবে ততক্ষণ মানব আকৃতিতে তার স্ত্রীকে (পরী জ্বীনকে) পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চত করা ও কনের যাতে একই সাথে ২য় বিয়ে না হয়, এ বিষয়টিও নিশ্চিত করা, আবার জ্বীন যদি পূরুষ হয়, তবে স্বামী হিসেবে তার মানব স্ত্রীর উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করতে পারা, সে সাথে স্ত্রী জ্বীন হোক বা মানুষ হোক, তার ভরণ-পোষণ ও নিরাপত্তা দিতে স্বামীকে যোগ্য হওয়া; এ বিষয় গুলো অবশ্যই যথাযথ সম্পন্ন হতে হবে বা দায়েম ও কায়েম থাকতে হবে (তবে জ্বীনের প্রকৃতিগত মৌলিক আকৃতি বা অধিকার তিনটি, এটি অক্ষুন্ন থাকবে। এছাড়া এ রকম তাদের আরো কিছু মৌলিক অধিকার যদি থেকে থাকে, সেগুলোও অটুট থাকবে, পরী জ্বীনের সাথে আলোচনা করে তাদেরকে শতভাগ এ ধরনের অধিকার সমূহ নিশ্চিত করতে হবে); নতুবা এ বিয়ে জায়েজ হবে না।
যেহেতু জ্বীন জাতি মানব আকৃতিতেও থাকতে পারে, যেহেতু ইসলামী শরিয়তের বিধান সমূহ জ্বীন জাতির জ্বন্যেও, যেহেতু জ্বীন জাতির জন্যে আলাদা করে কোন বিধান নেই (তবে জ্বীনদের থাকা ও খাওয়ার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে মানুষের চাইতে ভিন্নতা পাওয়া গেছে, আবার একসাথে থাকতে চাইলে তাতেও নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়নি), তাই মহিলা জ্বীন যদি মানব আকৃতিতে থাকে বা থাকতে চায় এবং মানব আকারে থাকার শর্ত যদি সে মেনে নেয়, সর্বপরি স্বামীকে যদি পরিপূর্ণ মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দেয়, তবে অবশ্যই কমপক্ষে ২ জন স্বাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ে জায়েজ হবে।
এখানে মহিলা জ্বীনের অভিভাবক যদি কাফের হয় বা এ বিয়েকে যদি মেনে না নেয়; এবং এ কারণে মহিলা জ্বীন বা পরীর পক্ষে যদি কোন স্বাক্ষীও না থাকে, তাহলে পরীর অভিভাবক ও তার পক্ষীয় স্বাক্ষী বিহীন, শুধু মানব কূলের স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমেই এ ধরনের বিয়ে দুরস্ত হবে।
তবে আবশ্যক না হলেও, জরুরী হচ্ছে, জ্বীন পক্ষীয় অভিভাবক ও জ্বীন পক্ষীয় স্বাক্ষী এবং মানুষের অভিভাবক ও মানব পক্ষীয় স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে এবং জ্বীন ও মানুষ এ উভয় সমাজের উপস্থিতিতে সবাইকে জানিয়ে প্রকাশ্যে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হওয়া।
তবে বিশেষ কোন কারণে, শুধু ২ জন মানব স্বাক্ষীর (অথবা ১ জন পূরুষ ও ২ জন নারী) উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন হলে, তবে তা শুদ্ধ হয়ে যাবে। যদিও নিন্দনীয় হবে।
বরের বাড়িতে বা বরের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে ওলিমা করে এবং স্বাক্ষীদের প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে (অবশ্যই শুধু মানুষদের থেকে, ২ জন পূরুষ ও ১ জন নারী। যেহেতু জ্বীন অন্য আকৃতিতেও থাকতে পারে, তাই জ্বীনের স্বাক্ষ্য এ ক্ষেত্রে আবশ্যক বা ধর্তব্য হবে না। কিন্তু আবশ্যক না হলেও ২ জন মানব স্বাক্ষী ছাড়াও কমপক্ষে আরো ২ জন জ্বীন স্বাক্ষী থাকলে, যেহেতু জ্বীনদেরও সমাজ রয়েছে), বিয়ের অনুষ্ঠান, জ্বীন ও মানুষ, এ উভয় জাতি ও সমাজকে জানিয়ে যদি ঘটা করে বিয়ে সম্পন্ন করানো হয়, তাহলেই কেবল এ বিয়ের আকদ্ সবদিক থেকে উত্তম হবে বলে ধরে নেয়া হবে।
[মানুষ ও জ্বীনের মধ্যে বিয়ে জায়েজ (রিভিউ), পোস্টটি শেয়ার করা যেতে পারে]
৭। বিস্তারিত আলোচনা ও বিচার-বিশ্লেষণ বা রায়ের পক্ষে যুক্তি সমূহঃ
উপর্যুক্ত এ মাসআলাটি বুঝার জন্য প্রথমে আমরা দেখবো-
বিয়ে বিষয়টি কী?
বিবাহ বা বিয়ে হল একটি সামাজিক ও ধর্মীয় বন্ধন বা বৈধ চুক্তি, যার মাধ্যমে সাধারণত দু'জন বিপরীত লিঙ্গের (একজন নারী, অপরজন পূরুষ; কখনই সমলিঙ্গ নয়) ব্যক্তির মধ্যে (মানুষ-মানুষ, জ্বীন-জ্বীন এবং কদাচিৎ ২/১ টি ক্ষেত্রে মানুষ-জ্বীন) দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হওয়া। যা এ ২ জন ব্যক্তির মধ্যে সম্পাদিত, আমৃত্যু শান্তিপূর্ণ ভাবে একসাথে থাকার বাস্তব ও জীবন্ত চুক্তি।
তবে এ চুক্তির আইন-কানুন, বিয়ে সম্পাদনের রীতি-নীতি, বিয়ে পরবর্তী জীবনে স্বামী ও স্ত্রীর পারস্পরিক অধীকার এবং একজনের প্রতি একজনের দায়িত্ব ও কর্তব্য সমূহ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) কর্তৃক নির্দিষ্ট।
আর এ চুক্তিটি সম্পাদিত হতে হয় মানুষকে জানিয়ে, মানুষের মাধ্যমে, প্রকাশ্যে-
তাই নিজেদের মনগড়া ভাবে, আকাশ-বাতাস স্বাক্ষী রেখে, নিজেদের মতো করে, পারবেন না দুনিয়ার কেউ কাউকে বিয়ে করতে।
কারণ বান্দা যদি হয় আল্লাহু তা'য়ালার, তবে তাকে মেনে চলতে হবে বিধান আল্লাহর। আর আল্লাহ্ সুরক্ষিত ও হেফাযত করবেন স্বামী ও স্ত্রী হিসেবে পারস্পরিক অধিকার ও হক, তার বান্দার।
পবিত্র কোরআনুল কারীমে, বিয়ের এ সম্পর্ককে এতই নিবিড় ঘোষণা করা হয়েছে যে, যেখানে একজনকে একজনের পোষাক বলা হয়েছে। অর্থাৎ একজনের পোষাক আরেক জন, যেখানে কাপড়ের পোষাকের আর আবশ্যকতা থাকবে না।
তার মানে, প্রয়োজনে একজনের সামনে আরেকজন সম্পূর্ণ উলঙ্গ ভাবে থাকতে পারবে এবং একজন অপরজনের উলঙ্গ দেহের যে কোন অংশ দেখতে ও টার্স করতে পারবে।
তার মানে পোষাক যেমন, মানুষের উলঙ্গ দেহের সাথে মিশে থাকতে পারবে, তেমনি স্বামী ও স্ত্রীও তাদের পরষ্পরের উদোম দেহের সাথে মিশে থাকতে পারবে।
অন্যদিকে অত্র আয়াতে স্বামী-স্ত্রীকে, একে অপরের জন্য পোষাক দ্বারা, তাদের একে অপরের ইয্যতের হেফাযতকারী, পরস্পরের আশ্রয়স্থল এবং পরস্পরের হৃদয়ের প্রশান্তি বুঝানো হয়েছে। যেমন পোষাক পরিধানে দেহে স্বস্তি ও প্রশান্তি আসে।
এছাড়া ‘পোষাক’ শব্দ ব্যবহার করে মহান আল্লাহ এই বুঝাতে চান যে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হবে, বন্ধুত্ব ও ভালোবাসাপূর্ণ, অতীব নিবিড় ও দৃঢ় বন্ধনযুক্ত; যা ছিন্ন করার মতো নয়।
যেমন পোষাক মানুষের অতীব প্রিয় যা থেকে সে কখনোই বিচ্ছিন্ন হ’তে চায় না।
অতএব স্বামী-স্ত্রী যদি পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ভঙ্গ করে এবং পরস্পরকে ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করে, তাহ’লে উভয়ে আল্লাহর কঠিন লা‘নতের শিকার হবে।
কারণ উভয়ের মাধ্যমেই আল্লাহু তা'য়ালা মানুষের বংশ রক্ষা করে থাকেন। মানে আল্লাহর সৃষ্ট মানব, স্বামী স্ত্রীর মাধ্যমেই দুনিয়াতে তিনি প্রেরণ করে থাকেন।
ফলে উভয়ের বিচ্ছিন্নতা কিংবা বিরূপ সম্পর্ক সন্তানদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। এবং যা না হলে, মহান রবের সৃষ্টি তত্ত্ব অনুযায়ী দুনিয়াতে মানব বা জ্বীন প্রেরণ কখনোই সম্ভব হতো না। অর্থাৎ মানুষ ও জ্বীনের বিষয়ে বিয়ের বিধান ও নিয়ম না থাকা, এটি সরাসরি রবের সৃষ্টিতত্ত্বের বিপরীত।
এবং যা সার্বিকভাবে মানব সমাজে অশান্তির কারণও বটে। যা আল্লাহু তা'য়ালা কখনোই কামনা করেন না।
এছাড়া পোষাক যেমন মানুষকে নানাবিধ ক্ষতি থেকে বাঁচায়, স্বামী-স্ত্রীর এই পবিত্র বন্ধনও তেমনি উভয়কে বহুবিধ গুনাহ থেকে পরস্পরকে রক্ষা করে।
এছাড়া মানুষের শারীরীক যৌনচাহিদা, এটি স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমেই, অর্থাৎ পরস্পরের মাধ্যমেই আল্লাহ তা'য়ালা সম্পন্ন করার বা পরস্পরকে গ্রহণ করার ব্যবস্থা করেছেন।
যা খাদ্যের মতোই মানুষ ও জ্বীন জাতির আরেকটি চাহিদা। আর এ চাহিদাটি, স্বামী, স্ত্রী ও দাসী ছাড়া; এবং স্ত্রী, শুধুমাত্র স্বামী ছাড়া, পৃথিবীর আর কারো কাছ থেকে গ্রহণ করতে পারবেন না। ইসলাম ধর্মে এ বিষয়ে রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা।
আবার বিয়ের অনুষ্ঠান ও চুক্তি সম্পাদনের পর স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কিছু আবশ্যকীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। যেমন-
১। যথাযথ সম্মান করা: রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি যদি (আল্লাহ ছাড়া) অন্য কাউকে সিজদা করার হুকুম দিতাম, তবে স্ত্রীকে তার স্বামীর প্রতি সিজদা করার হুকুম দিতাম।’ (তিরমিজি: ১১৫৯)
হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে যে, কোন নারী উত্তম? মহানবী (সা.) প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘যে নারীর প্রতি স্বামী নজর করলে সে স্বামীকে আনন্দ দান করে, স্বামীর কথামতো চলে, নিজের ব্যক্তিগত ব্যাপারে স্বামীর বিরুদ্ধাচরণ করে না এবং স্বামীর মতের বিরুদ্ধে তার সম্পদ ব্যয় করে না।’ (সুনানে নাসায়ি, পৃষ্ঠা-১৪২)
হাদীসে রয়েছে, স্বামী যদি স্ত্রীকে (ন্যায়সঙ্গত ও প্রয়োজনে) হলুদ বর্ণের পর্বত হতে কালো বর্ণের পর্বতে এবং কালো বর্ণের পর্বত হতে সাদা বর্ণের পর্বতে পাথর স্থানান্তরের নির্দেশ করে, তবে তার দায়িত্ব, তা নিষ্ঠার সাথে পালন করা। (আহমাদ)[1]
একজন স্বামীর প্রতি স্ত্রীর দায়িত্ব ও সম্মান দেওয়ার জন্য এ ৩টি হাদিসই যথেষ্ট।
২। আদেশ পালন: স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর জন্য আবশ্যক। তার বৈধ আদেশ পালন করা ওয়াজিব। স্বামীর আদেশ পালনে সওয়াব রয়েছে। তার আদেশ অমান্য করা গুনাহ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘স্বামী যখন তার প্রয়োজনে স্ত্রীকে ডাকে, সে যেন অবশ্যই তার কাছে আসে, যদিও সে রান্নাবান্নার কাজে ব্যস্ত থাকুক।’ (তিরমিজি: ১১৬০)
৩। চরিত্রের সুরক্ষা করা: রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো নারী যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজানের রোজা রাখে, নিজের সতীত্ব রক্ষা করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, তাহলে তাকে (কিয়ামতের দিন) বলা হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৬৬১)
এ ছাড়া সংসারের দেখাশোনা করা, স্বামীর সম্পদ হেফাজত করা এবং সন্তান প্রতিপালন করাও স্ত্রীর অন্যতম দায়িত্ব।
অপরপক্ষে, সুখী সংসার গঠনে এবং পরিবারের দায়িত্বশীল হিসেবে এ ক্ষেত্রে স্বামীর দায়িত্ব বেশি। একটি সুখী পরিবার গড়তে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সমূহ, নিম্নে উল্লেখিত আলকোরআন ও হাদীসের বাণী সমূহ পড়লে আশাকরি সকলের বুঝে আসবে-
১। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সদ্ভাবে বসবাস করো। যদি তোমরা তাদের অপছন্দ করো, (তবে হতে পারে) তোমরা এমন বস্তুকে অপছন্দ করছ, যার মধ্যে আল্লাহ প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন। (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯)
২। মহানবী (সা.) বলেন, ‘সাবধান! তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদাচরণ রক্ষা করে চলবে। কারণ তারা তোমাদের সাহায্যকারী। তোমরা তাদের মালিক নও। তারা তোমাদের স্পষ্ট অবাধ্যতা অবলম্বনের আগে তাদের ওপর কঠোরতা আরোপের কোনো অধিকার তোমাদের নেই। সাবধান! তোমাদের ওপর তোমাদের স্ত্রীদের হক রয়েছে। তোমাদের ওপর তাদের পাওনা হক হলো- তোমরা তাদেরকে সুন্দররূপে পানাহার ও পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করবে।’ (জামে তিরমিজি, রিয়াদুস সালেহিন, পৃষ্ঠা-১৩৯)
৩। আয়েশা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) যখন (ফজরের সুন্নত) সালাত আদায় করতেন, তখন আমি জাগ্রত হলে তিনি আমার সঙ্গে কথা বলতেন। অন্যথায় তিনি শয্যাগ্রহণ করতেন এবং ফজরের সালাতের জন্য মুয়াজ্জিন না ডাকা পর্যন্ত শুয়ে থাকতেন। (বুখারি, হাদিস : ১১৬১)
৪। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুমিন স্বামী মুমিন স্ত্রীকে ঘৃণা করতে পারে না। যদি তার একটি অভ্যাস অপছন্দ হলেও অন্য আরেকটি পছন্দ হয় এবং তাকে খুশি করে।’ (মুসলিম)
৫। স্ত্রী অসুস্থ বা রোগাক্রান্ত হলে সাধ্যমতো তার সেবা করা স্বামীর কর্তব্য। ইবন ওমর (রা.) বলেন, ওসমান (রা.) বদর যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। কেননা তাঁর স্ত্রী আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কন্যা অসুস্থ ছিলেন। তখন নবী করিম (সা.) তাঁকে বলেন, বদর যুদ্ধে যোগদানকারীর সমপরিমাণ সওয়াব ও (গনিমতের) অংশ তুমি পাবে। (বুখারি, হাদিস : ৩১৩০)
৬। স্ত্রীকে পারিবারিক কাজে সহযোগিতা করা স্বামীর জন্য একান্ত করণীয়। বিশেষত সে অসুস্থ হলে বা তার পক্ষে কোনো কাজ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়লে তাকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করা জরুরি। আয়েশা (রা.) বলেন, তিনি পরিবারের কাজ করতেন, যখন সালাতের সময় হতো তখন তিনি সালাতের জন্য বের হয়ে যেতেন। (বুখারি, হাদিস : ৬৭৬)
৭। স্ত্রীকে বিনা কারণে বা তুচ্ছ কোনো ঘটনায় মারধর করা উচিত নয়। বরং তার ত্রুটি বুঝিয়ে দিয়ে তাকে সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে। আর মারধর করা রাসুল (সা.)-এর আদর্শ নয়। নবী করিম (সা.) কখনো তাঁর স্ত্রীদের প্রহার করেননি। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) নিজ হাতে কোনো কিছুকে প্রহার করেননি। না তাঁর কোনো স্ত্রীকে, না কোনো খাদেমকে। (মুসলিম, হাদিস : ২৩২৮)
৮। বিদায় হজের ভাষণে মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। কেননা তোমরা আল্লাহর আমানতস্বরূপ তাদেরকে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর বাণীর মাধ্যমে তাদের যৌনাঙ্গের বৈধতা লাভ করেছ। তোমাদের জন্য তাদের দায়িত্ব হলো তারা তোমাদের বিছানায় এমন কাউকে স্থান দেবে না, যা তোমরা অপছন্দ করো। যদি তারা এরূপ করে, তবে তাদেরকে হালকা প্রহার করো। আর তোমরা যথাযথভাবে তাদের অন্ন, বস্ত্র প্রদান করবে।’
জনৈক সাহাবি মহানবী (সা.)-কে প্রশ্ন করেন, আমাদের ওপর স্ত্রীদের হক কী? রসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি খেলে তাকেও খাওয়াবে, তুমি পরিধান করলে তাকেও পরিধান করাবে। চেহারায় প্রহার করবে না এবং ঘরে রাখবে, ঘর থেকে বের করবে না।'
তার মানে স্ত্রীদেরকে নিরাপত্তা প্রদান ও শান্তির ব্যবস্থা করার দায়িত্ব তার স্বামীর।
৯। মহানবী (সা.) অপর হাদিসে বলেছেন, ‘যদি কারো দুজন স্ত্রী থাকে এবং তাদের প্রতি ন্যায়বিচার না করে, তবে সে বিচার দিন অর্ধেক দেহ নিয়ে উঠবে।’ (তিরমিজি)
তাহলে বুঝাগেল, বিয়ে হচ্ছে, ১ জন পূরুষ ও ১ জন নারীর মাঝে একটি দৃঢ় পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় বৈধ চুক্তি। আর এ চুক্তির প্রধান ২ টি শর্ত হচ্ছে, চুক্তিকৃত ঐ নারী ও পূরুষ-
(১) আমৃত্যু একসাথে থেকে, পরস্পর পরস্পরকে বিভিন্ন ক্ষয়-ক্ষতি থেকে রক্ষা করবেন, একে অপরের প্রতি দায়িত্ব ও অধিকার সমূহ যথাযথ পালন করবেন ও একে অপরকে প্রশান্তিতে রাখার চেষ্টা করবেন। (উপরোক্ত হাদীস সমূহ দ্রষ্টব্য) এবং
(২) মানুষের যে সেক্সুয়াল বা যৌন চাহিদা তা শুধুমাত্র একজন, অপরজন থেকেই (বা বৈধ ভাবেই) পূর্ণ করবেন। অন্য কারো কাছ থেকে নয়।
এবার দেখব, মানুষ কী?
মহান রব মানুষকে তাঁর শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে এবং অনেকটা কঠিন পদার্থের মত করে, যেমন দৃশ্যমান ভর ও ওজন থাকা, বল প্রয়োগে গতি প্রাপ্ত হওয়া বা গতির পরিবর্তন হওয়া, নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতি থাকা, খাদ্য পাণীয় ও যৌন চাহিদার প্রয়োজন হওয়া ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।
মানুষ সৃষ্টির বিষয়ে মহান আল্লাহ ঘোষনা করেন-
: ‘আমি (আল্লাহ) গন্ধযুক্ত কাদা থেকে তৈরি শুষ্ক ঠনঠনে মাটি থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ২৬)
তবে ‘মানুষ মাটির তৈরি’—এ কথা সর্বতোভাবে আদম (আ.) সম্পর্কে প্রযোজ্য। তাঁর সৃষ্টির পর তাঁর সন্তানদের জন্ম হয়েছে তাঁর ঔরস থেকে।
মানুষ খায়, ঘুমায় ও বংশ বিস্তার করে। এঁরা সামাজিক জীব। একাকী এঁরা বাঁচতে পারে না। অর্থের বিনিময়ে হোক বা আত্মীয়তার বন্ধনে হোক বা ঈমানের প্রেরণায় হোক বা হৃদয়ের আকুতিতে হোক, এঁরা জীবনে একে অপরের সহযোগিতা নিয়ে বেঁচে থাকে।
এদের রয়েছে নির্দিষ্ট মস্তিষ্ক, নির্দিষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, হাত, মাথা ও যৌনাঙ্গ এবং নির্দিষ্ট সেক্সুয়াল ও প্রজনন প্রক্রিয়া।
এরা মনের ভাব প্রকাশ করতে, ভাষার ব্যবহার করে বা আকার ইঙ্গিত প্রদান করে। এঁরা সভ্যতা, সংষ্কৃতি, শিল্পকলা ও ইতিহাস গড়ে।
এরা যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি ও আগুনের ব্যবহার করে, ইত্যাদি। এবং এভাবে এঁরা বেঁচে থাকে।
এবার দেখবো জ্বীন কী?
জ্বীন জাতি একটি রহস্যময় সত্তা। যেহেতু এদের বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান মানুষের কাছে নেই। তবে এর উল্লেখ আল কুরআন ও আল হাদিসে রয়েছে। কিন্তু থাকলেও তা বিস্তারিত ভাবে নয়। কেউ যদি বলে আছে, তবে এটা হয়তো তার অজ্ঞতা, না হয়, ঈমানের অন্ধত্ব বা পাগলামি বা উগ্রতা।
যেহেতু জ্বীন সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে পূর্নাঙ্গ একটি সূরা নাযিল হয়েছে, এবং এ বিষয়ে রয়েছে অনেক গুলো আয়াত ও হাদীস। তাহলে পৃথিবীতে জ্বীন যে রয়েছে, তা কিন্তু সত্য। আর এ বিষয়টি অবিশ্বাস করলে, তবে যে অবিশ্বাস করেছে সে নিঃস্বন্দেহে কাফির হয়ে যাবে।
জ্বীন এমন এক জাতি যারা আগুন থেকে সৃষ্টি এবং মানুষ ও ফেরেশতাদের থেকে পৃথক। মহান রব জ্বীনকে মানুষ সৃষ্টির অনেক অনেক আগে সৃষ্টি করেছেন।
কোরআনের ভাষ্য মতে, ইবলিশ শয়তান আদম (আ.)-এর সামনে সিজদা করতে অস্বীকার করেছিল। তাই তাকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। সে ছিল জিনদের বংশোদ্ভূত। (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ৫০)
এতে প্রমাণিত হয়, মানুষ সৃষ্টির আগে জ্বীনকে সৃষ্টি করা হয়। এবং প্রত্যেক শয়তানই মূলত একজন জ্বীন।
বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এবং আধুনিক জ্ঞান অনুসারে, অ্যান্টিম্যাটার বা ডার্ক ম্যাটারের সাথে জ্বীনদের সৃষ্টির ধারণা তুলনা করা যেতে পারে। যাহোক আজকের প্রবন্ধে আমি শুধু, এ প্রবন্ধের সাপেক্ষে প্রাসঙ্গিক বিষয় সমূহই লিখবো।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহু তা'য়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি প্রজ্বলিত অগ্নিশিখা থেকে জিন সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ২৭)
জ্বীন যে আগুনের শিখা হতে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। যেহেতু এ বিষয়ে আল কোরআনের কয়েকটি আয়াতেই রয়েছে এবং এর বিপরীত কোন আয়াত নেই।
মানুষ ও জ্বীনকে আল্লাহু তা'য়ালা সৃষ্টি করেছেন, একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য। আল্লাহু তা'য়ালা বলেন-
“আমি জ্বীন ও মানুষকে কেবলমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি” (সূরা আয্-যারিয়াত, ৫৬)
হাদীস অনুযায়ী জ্বীনের আকৃতি মৌলিকভাবে তিন প্রকার। যেমন-
দৃশ্যমান : অর্থাৎ জিনের প্রকৃত আকৃতি, মানব চোখে অবলোকনযোগ্য। (তাবরানি : ৫৭৩)
অদৃশ্যমান : অর্থাৎ জিনের আকৃতিবিহীন শুধু শারীরিক উপস্থিতি অনুভূত হওয়া। (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২৩)
বিকৃত আকৃতি : মানুষ, পশু-পাখি কিংবা বৃক্ষলতার আকৃতি ধারণ করা (তাবরাণীঃ ৪০১২)
জ্বীনেরা মানব আকৃতিতে থাকতে পারে, মানে বিকৃত আকৃতিতে থাকতে পারে।
একটু চিন্তা করলে, আপনাদের তা আরো ভালোভাবে বুঝে আসবে।
সৃষ্টিগত দিক থেকে মূলত, ইবলিশ এবং জ্বীন একই প্রকৃতির। পার্থক্য হবে শুধু ইবলিশের ঈমান নেই, কিন্তু ভালো জ্বীনদের ঈমান রয়েছে। ইয়াহুদিরাও মানুষ, আর মুসলিমেরাও মানুষ, এ রকম, কিন্তু সবাইতো মানুষই।
তাই এ দিক থেকে একজন শয়তানের জীবন ধারন বা মৌলিক প্রকৃতি যেমন হবে, একজন ভালো জ্বীনেরও ঠিক তেমনই হবে, এটিই স্বাভাবিক।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত দীর্ঘ একটি হাদীসে এক দুষ্ট লোকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যে প্রতি রাতে যাকাতের মাল চুরি করতে আসতো। আবু হুরায়রা (রাঃ) প্রতি রাতেই তাকে ধরে ফেলতেন। কিন্তু লোকটি বিভিন্ন অনুরোধ করে মাফ নিয়ে চলে যেত এবং পরের রাতে আবার চুরি করতে আসতো। পরপর তিন রাতে সেই মানুষটিকে ধরার পরে রাসুল(সাঃ) কে ঘটনা অবহিত করলে তিনি আবু হুরায়রা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেন, “ওহে আবু হুরায়রা (রাঃ), তুমি কি জানো তুমি এই তিন রাতে কার সাথে কথা বলেছ? ওটা শয়তান ছিল।” (বুখারী, ৩২৭৫)
বদরের যুদ্ধের সময় ইবলিশ শয়তান মক্কার কুরাইশদের কাছে বানু কিনানাহর গোত্রসর্দার সূরাক্বা ইবনে যুশাম এর আকার ধরে গিয়ে তাদেরকে রাসুল(সঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্ররোচনা দিয়েছিল। (ইবনে কাসীর, আল বিদায়া ওয়াল নিহায়া, ৫/৬২)
তাহলে স্পষ্টই বুঝা গেল, জ্বীন মানুষের আকৃতিতে, মনূষ্য সমাজে মানুষের পাশাপাশি, মানুষের সাথে থাকতে পারে।
তবে শুধু বিচ্ছিন্ন ২/১ টি ঘটনার কারণে, মানুষের পরিপূর্ণ জীবনচক্রে, তা আনটেস্টেড। তবুও কোরআন ও হাদীসে যেখানে এ বিষয়ে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই, বরং জ্বীন মানব আকৃতিতে, মানুষের বেশে, থাকতে পারে এ বিষয়ে রয়েছে সমর্থন, তাই ঈমানী দিক থেকে বিষয়টি প্রমাণিত।
এছাড়া জ্বীন, মানুষের সাথে আছর/সাহর করে, মানুষের মধ্যেও থাকতে পারে। যেমন কুরআন বলছে,
“যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়।” (সূরা বাক্বারা, ২৭৫)
হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে- রাসুল(সঃ) বলেছেন,
“শয়তান আদম সন্তানের শরীরে প্রবাহিত হয়, যেমন রক্ত শরীরে প্রবাহিত।” (বুখারী, ৩৩/২৫১। মুসলিম, ২১৭৫)।
ইমাম আহমদের (রঃ) ছেলে আব্দুল্লাহ (রঃ) থেকে বর্ণিত, “আমি আমার বাবা (ইমাম আহমাদ, রঃ) কে বললাম- কিছু মানুষ, মানুষের শরীরে জ্বীনের ভর করাকে বিশ্বাস করে না। তিনি বলেন- ও আমার সন্তান, তারা মিথ্যা বলছে। আসর করা অবস্থায় অসুস্থ লোকের মুখ দিয়ে জ্বীন কথাও বলতে পারে।” (মাজমু ফতোয়া- ইবনে তাইমিয়াহ ১৯/১২)
অন্য হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, রাসুল(সঃ) একবার একটি অসুস্থ বালকের সাক্ষাত পেয়েছিলেন যার ওপর জ্বীনের ভর ছিল।
রাসুল (সাঃ) ছেলেটির দিকে ফিরে জোরে বলেন- “ও আল্লাহর শত্রু, বের হয়ে আসো। ও আল্লাহর শত্রু, বের হয়ে আসো। ছেলেটি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।” (ইবনে মাজাহ, ৩৫৪৮। আহমদ ৪/১৭১, ১৭২)।
এখন কথা হলো জ্বীন কি মানুষের মতো মানুষের খাবার খেতে পারে? ও মানুষের মতো মানুষ যেভাবে ঘর বাড়িতে বসবাস করে, ঐভাবে বসবাস করতে পারে?
উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ, পারে। মানুষের উপর ভর বা আছর করতেতো পারেই, যা উপরের আলোচনায় আপনারা তা বুঝতে পেরেছেন।
এখন কথা হচ্ছে, জ্বীনের নিজস্ব বা তার বিকৃত অন্যকোন রূপে পারে কিনা? হাদীস অনুযায়ী বুঝা যায়, সেভাবেও পারে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, অবশ্যই শয়তান (মানুষের) খাবার খেতে সক্ষম হয়, যদি খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ না বলা হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৭৬৬)
তিনি আরো বলেন, তোমাদের কেউ নিজ বাড়িতে প্রবেশকালে এবং খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বললে, তখন শয়তান (তার সঙ্গীদের) বলে, তোমাদের জন্য রাত যাপনের স্থানও নেই এবং রাতের খাবারও নেই। আর সে বাড়িতে প্রবেশকালে ‘বিসমিল্লাহ’ বললে এবং রাতে খাবার সময় না বললে শয়তান বলে, তোমরা রাতের খাবার পেলে, কিন্তু রাত যাপনের জায়গা নেই। আর যখন সে খাবারের সময়ও বিসমিল্লাহ না বলে, তখন শয়তান বলে, তোমরা রাত যাপনের জায়গাও পেলে এবং খাবারও পেলে।
জ্বীনেরা বিকৃত আকৃতিতে, মানে বিভিন্ন জীব ও তরুলতার আকৃতিতে থাকতে পারে, যা নিম্নোক্ত হাদীস পাঠের মাধ্যমে আরো সহজে বুঝা যাবে।
আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল(সঃ) বলেছেন-
“মদিনার কিছু সংখ্যক জ্বীন মুসলমান হয়েছে। এদেরকে (প্রাণী হিসেবে) যদি কেউ দেখো, তাহলে তিনবার সাবধান করবে। তারপরেও আবার এলে সেই প্রাণীকে হত্যা করবে।” (মুসলিম, ২২৩৬)
মানুষের মতো জ্বীনেরাও পূরুষ এবং নারী হতে পারে। কোরআনের ঘোষণা অনুযায়ী, মহান রব প্রত্যেকটি সৃষ্টিকেই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। নিম্নোক্ত হাদীস থেকে তা আরো ভালো ভাবে বোঝা যাবে-
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন-
“যে এই আয়াত (আয়াতুল কুরসী) পড়বে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত করে দিবেন এবং কোন পুরুষ এবং নারী জ্বীন-শয়তান তার কাছে আসতে পারবে না।” (সহিহ বুখারী, ৫০১০)
এছাড়া মানুষের চির সঙ্গী হিসেবে একজন জ্বীন শয়তান ও একজন ফেরেশতা তার শরীরে নিযুক্ত রয়েছে। যেমন-
হাদিসে সুফিয়ানের বর্ণনায় এসেছে-
وقد وكِّل به قرينُه من الجنِّ وقرينُه من الملائكة
‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার সঙ্গে তার সহচর জিন (শয়তান) এবং সহচর ফেরেশতা নিযুক্ত করে দেওয়া হয়নি।’ (মুসলিম)
কেয়ামতের দিন মানুষের সঙ্গী এক শয়তান বাক-বিতণ্ডায় লিপ্ত হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
قَالَ قَرِیۡنُهٗ رَبَّنَا مَاۤ اَطۡغَیۡتُهٗ وَ لٰکِنۡ کَانَ فِیۡ ضَلٰلٍۭ بَعِیۡدٍ - قَالَ لَا تَخۡتَصِمُوۡا لَدَیَّ وَ قَدۡ قَدَّمۡتُ اِلَیۡکُمۡ بِالۡوَعِیۡدِ
`তার সহচর (শয়তান) বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমি তাকে অবাধ্য হতে প্ররোচিত করিনি। বস্তুতঃ সে নিজেই ছিল ঘোর বিভ্রান্ত। আল্লাহ বলবেন, তোমরা আমার কাছে বাক-বিতণ্ডা করো না। অবশ্যই আমি আগেই তোমাদের সতর্ক করেছিলাম।' (সুরা কাফ : আয়াত ২৭-২৮)
আয়াতের বিশ্লেষণে হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- এটাই হলো নিয়োগকৃত শয়তান। হাদিসে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন নামাজ পড়ে, তখন সে যেন তার সামনে দিয়ে কাউকে যেতে না দেয়। যদি সে অস্বীকার করে (বাধা মানতে না চায়) তবে সে যেন তার সাথে লড়াই করে। কেননা তার সাথে তার সঙ্গী শয়তান রয়েছে।’ (মুসলিম)
অন্যদিকে যারা খাঁটি মুমেন, দুষ্ট জ্বীন তাদেরকে আল্লাহু তা'য়ালা থেকে গাফেল করতে পারবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
পবিত্র কালামে পাকে দুষ্ট জিন ও শয়তানের উদ্দেশে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যারা আমার একনিষ্ঠ বান্দা, তাদের প্রতি তোমার কোনো প্রভাব কার্যকর হবে না।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ৪৩)
সবশেষে বলা যায়, জ্বীন সম্পর্কে কোরআন ও হাদীসে আরো অনেক বর্ণনাই রয়েছে। কিন্ত তবুও এর প্রায় সবগুলোই শুধু বিশ্বাস নির্ভর। বাস্তবে মানুষের চর্ম চক্ষে ও জ্ঞান-বিজ্ঞান দ্বারা জ্বীনের বৈশিষ্ট্য প্রমাণিত করা যায়নি। ফলে জ্বীন মানুষের নিকট অদ্ভূত ও রহস্যময় প্রাণি হিসেবেই থেকে গেছে।
যাক উপরোক্ত আলোচনার পর, আমরা এবার দেখবো-
জ্বীনের সাথে মানুষের বিয়ে হতে পারে কিনা?
এ বিষয়টি রিসার্চের শুরুতে প্রথমেই দেখতে চাই, পবিত্র কোরআন ও হাদীসে এ বিষয়ে কোন নিষেধাজ্ঞা আছে কিনা (?), বা এ বিষয়ে কী বলা আছে? অর্থাৎ আইনগত দিকটিই প্রথমে আমরা বুঝতে চেষ্টা করবো।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন কারীমে এই প্রসঙ্গে বলেন,
“আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা রুম : আয়াত ২১)
উপর্যুক্ত আয়াত দ্বারা জ্বীনের সাথে বিয়ে অবৈধ, এ কথা প্রমাণিত হয় না। এবং জ্বীনের সাথে সহবাস অবৈধ, এটিও প্রমাণিত হয় না।
উপরুন্ত এ আয়াতে মানুষ ও জ্বীনের সহবাস বৈধ এবং তাদের মিলনে সন্তান হতে পারে, সে দিকেই ইন্ডিকেটকৃত।
এ বিষয়ে আমি যা বুঝতে পেরেছি, সংক্ষেপে, তা আমি বুঝিয়ে বলছি।
উপরের আয়াতে বলা আছে, তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গীদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
অনেকেই এখানে মানুষ থেকেই, মানুষের সৃষ্টি, এটিই বুঝাতে চাইবেন এবং চাচ্ছেন। আর এভাবেই আপনারা ফতোয়া দিচ্ছেন।
কারণ তোমাদের মধ্য থেকে বলতে, আপনারা শুধু মানুষ দেখতে পান।
কিন্তু আমার কথা হলো, পবিত্র কোরআন শরীফ, এটি কি শুধু মানুষদের জন্য? যদি এ মহিমাণ্বিত কিতাব, জ্বীনের জন্যেও হয়, তাহলে, তোমাদের বলতে এখানে, আপনারা শুধু মানুষদের জন্য কী করে বুঝলেন?
তোমাদের বলতে জ্বীন কেন অন্তর্ভৃক্ত থাকবে না?
যেহেতু উপরোক্ত আয়াত, মানুষ ও জ্বীন উভয় জাতির জন্য, এবং যেহেতু এখানে মানুষ ও জ্বীনকে আলাদা করে কিছু বলা নেই, এছাড়া অন্যকোন আয়াতেও এর বিপরীত কিছু বলা নেই; তাই আমি এ আয়াতে কারিমার সংক্ষিপ্ত ব্যাখায়, মানুষ ও জ্বীন জাতির বিয়ের বৈধতা, সহবাসের বৈধতা এবং জ্বীন জাতির অন্যান্য রূপান্তর সমূহ যদি ফিক্সড থাকে, ভেরিয়েবল না হয়, তবে জ্বীন এবং ইনসানের মিলনে আল্লাহু তা'য়ালা চাহেত সন্তানও হতে পারে, এ বিষয়টিই বুঝতে পাই।
আপনারা আমার এ ভাব ধারাটি যদি না বুঝেন, তাহলে কমেন্টস করুন, আরো ভালো ভাবে বুঝিয়ে দেবো ইনশা'আল্লাহ।
অন্যদিকে বিয়ের ক্ষেত্রে একজন পুরুষের জন্য আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়া খুবই জরুরী। কারণ বিয়ে সম্পর্কিত খরচ এবং বিয়ে পরবর্তী যত সাংসারিক ব্যয়ভার বহন করতে হবে তার সব কিছুই স্বামীর দায়িত্ব। এজন্য অনেক পুরুষই বিয়ের উপযুক্ত বয়স হওয়া সত্ত্বেও আর্থিক সমস্যার কারণে বিয়ে করতে চায় না বা বিয়ে করতে পারেনা। আর এসব কারণে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে বিয়েও করতে বলেছেন এবং পাশাপাশি আর্থিক স্বাবলম্বী করে দেওয়ারও প্রতিশ্রতিও দিয়েছেন।
মহান রব বলেন-
“তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিয়ে সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে স্বচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। যারা বিবাহে সমর্থ নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন।” (সূরা নূর : আয়াত ৩২-৩৩)
অর্থাৎ যাদের বিয়ের সময় হয়েছে কিন্তু বিয়ে করছে না শুধু আর্থিক সমস্যার কারণে যদি তারা ন্যায়পরায়ণ হয় তাহলে মহান আল্লাহ তাদেরকে স্বচ্ছল করে দিবেন, কারণ তিনি বিরাট প্রাচুর্যের মালিক।
উপরোক্ত আয়াতে, স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণ-পোষণ যদি কোন স্বামী দিতে না পারেন, এবং এ ভয়ে বিয়ে না করেন, তবে আল্লাহ নিজ থেকে তাকে স্বচ্ছল করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এ আয়াত থেকে আরো একটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, যদি জ্বীনকে বিয়ে করতে কেউ নিজকে অভাবী মনে করেন, তাহলে আল্লাহু তা'য়ালা তাকে স্বচ্ছলতার ঘোষণা দিয়েছেন।
তার মানে জ্বীন যদি নিজ থেকে অর্থ-সম্পদ দেয় বা দেয়ার ব্যবস্থা করে এবং এরপর স্ব-ইচ্ছায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায়, এতেতো নাজায়েজের কিছু আমি দেখিনা।
স্ত্রী জ্বীন কর্তৃক ইনকাম করে দেয়ার বিষয়টিতো, উপরোক্ত আয়াত দ্বারাই প্রমাণিত। যদি কোন মহৎ উদ্দেশ্য থেকে থাকে, তাহলে স্বামীর এখানে মনক্ষুন্নতারও কিছু থাকতে পারে না। যেহেতু আল্লাহতো আর নিজে এসে, ইনকাম করে স্বচ্ছল করবেন না।
আবার একজন মুসলমান কাকে বিয়ে করতে পারবেন না, এ বিষয়ে আল কুরআনের স্পষ্ট নির্দেশনা এসেছে। কুরআন বলছে,
“তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকন্যা, ভগ্নিকন্যা, তোমাদের সে মাতা যারা তোমাদের স্তন্যপান করিয়েছে, তোমাদের দুধ বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা, তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে এ বিবাহে তোমাদের কোন গোনাহ নেই। তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী এবং দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা; কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকারী, দয়ালু।” [সূরা নিসা : আয়াত ২৩]
এ আয়াতে জ্বীনকে বিয়ে করা যাবে না, তাতো একবারও বলা হয়নি।
এছাড়া মোহর প্রদান করার ক্ষেত্রেও মহান রব নির্দিষ্ট কোন বস্তু বা কাগজের টাকা দিতে হবে, তা নির্দিষ্ট বা একেবারেই আবশ্যক করেননি। এ বিষয়ে আপনারা নিম্নোক্ত আয়াতটি পড়তে পারেন।
“আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশি হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।” [সূরা নিসা : আয়াত ৪]
এ আয়াতে মোহর দিয়ে বিয়ে করাকে আবশ্যক করা হয়েছে, কিন্তু কী দিতে হবে তা নির্দিষ্ট করা হয়নি।
এবং পবিত্র হাদীস শরীফেও বিষয়টি একেবারে নির্দিষ্ট নয়। এমনকি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে মোহরানা বাবদ লোহার আংটি হলেও আনতে বলেন, তাতে অক্ষম হলে শুদ্ধভাবে কোরআন শিক্ষা দেয়ার কথা বলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২০২)
তবে আবশ্যক এতোটুকু যে, মোহরানা দিতে হবে, বর ও কনের খুশিমনে। আবার বিয়ের সময়ই যে মোহরানা পরিশোধ করতে হবে, শরিয়তে এরও কোন আবশ্যকতা নেই। অপরদিকে বিয়ের সময় মোহর কত দিতে হবে বা কী দিতে হবে, তা নির্দিষ্ট না করে, বিয়ের পর, সুবিধাজনক সময়ে, স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একত্রিত হয়ে যদি মোহর কী দিতে হবে বা কী পরিমাণ দিতে হবে, তা ঠিক করে, তবে তাও শুদ্ধ হবে। (বেহেশতী জেওর, ৪র্থ খন্ড, ২য় ভলিউম, এমদাদিয়া লাইব্রেরী, মাসআলা নং ১০)
কিন্তু আলেমগণ মোহরের সর্ব নিম্ন পরিমাণ ১০ দিরহাম বা (প্রায় পৌনে তিন তোলা রুপা) নির্দিষ্ট করেছেন। (বেহেশতী জেওর, ৪র্থ খন্ড, ২য় ভলিউম, এমদাদিয়া লাইব্রেরী, মাসআলা নং ২)
আবার উপরোক্ত আয়াতেই উল্লেখ রয়েছে, স্ত্রী ইচ্ছে করলে মোহরানার সম্পূর্ণ টাকা/অর্থ তিনি মাফও করে দিতে পারেন (বেহেশতী জেওর, ৪র্থ খন্ড, ২য় ভলিউম, এমদাদিয়া লাইব্রেরী, মাসআলা নং ১১)
তাহলে এমনটি নয় যে, জ্বীনতো শূন্যে মিলিয়ে যাবেন, মোহরানা নিবেন বা দিবেন কিভাবে? একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন, জ্বীনের সাথে বিয়ে সম্পাদনের বিষয়ে এক্ষেত্রেও কোন বাধা নেই।
বিয়ের বিষয়ে নিম্নোক্ত আয়াতটিও পড়তে পারেন-
“সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে একটিই, অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা।” [সূরা নিসা : আয়াত ৩]
এ আয়াতেও জ্বীনের সাথে মানুষের বিয়ে অবৈধ, এ কথা বলা হয়নি।
অতএব, এ কথা প্রমাণিত যে, আইনগত দিক থেকে জ্বীনের সাথে মানুষের বিয়ে অবৈধ নয়। এরপরও আপনারা যদি কোন যুক্তি খুঁজে পান, তাহলে অবশ্যই তা জানাবেন।
আসুন এবার আমরা দেখবো, জ্বীন ও মানুষের বিয়ের ক্ষেত্রে তাদের পরষ্পরের সত্ত্বা বা বৈশিষ্ট্য ভিন্ন কিনা? এবং যার জন্য বিয়ে নাজায়েজ হবে কিনা?
আমার জ্ঞান ও বিশ্বাস অনুযায়ী, যেহেতু ইসলামী 'শরিয়ত' জ্বীন ও মানুষ উভয়ের জন্যে, মানে উভয় জাতির জন্যে একটিই, তাই এ উভয় জাতির মৌলিক স্বত্ত্বা বা বৈশিষ্ট্য একটিই হবে, এটিই যুক্তি সঙ্গত। যেহেতু হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) জ্বীনেরও নবী (সাঃ)। তাহলে ভিন্ন একটি স্বত্ত্বা বা বৈশিষ্ট্যের জাতির জন্য, আরেক বৈশিষ্ট্যের জাতি থেকে নবী (সাঃ) পাঠাবেন, এটা কখনো যৌক্তিক হতে পারে না। এক বৈশিষ্ট্য, আরেক বৈশিষ্ট্যের ঈমান ও আমল কিভাবে করে দেখাবে বা শিখাবে? বলুন (?), শিশুকে শিক্ষা দিবে, শিশু সুলভ মানুষ, তাই না? তাহলে জ্বীন যদি আরেক বৈশিষ্ট্যেরই হয়, তবে মানুষ কিভাবে জ্বীনকে শিক্ষা দিতে পারে? অথচ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মানুষ ছিলেন; এবং আল্লাহু তা'য়ালা বলছেন, “আমি তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের নবী প্রেরণ করেছি” (আলকুরআন, সূরা আত-তাওবা ১২৮)। এভাবে হার কাজে বা যে কোন মাসআলার সমাধানে বা কাজের তরীকায়, যেহেতু জ্বীনের জন্য করা হয়নি আলাদা শরিয়ত, তাই আমি নিশ্চিত, জ্বীন ও মানুষের শারীরিক গঠনগত বা চারিত্রিক বৈশিষ্টগত মৌলিক কোন পার্থক্য নেই। হয়তো উভয় জাতির মধ্যে তাদের স্ব স্ব স্থানে অনেকগুলো বাড়তি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন জ্বীন বর্ণচোরা বা আকৃতিবিহীনও থাকতে পারে বা সাহর করে বা বিভিন্ন আকৃতি ধরেও থাকতে পারে এবং আপনাদের সকলেরই জানা মানুষদের পূর্বপূরুষ গণও এক সময় দীর্ঘাকৃতির ছিলেন এবং দীর্ঘ হায়াত পেতেন। এ রকম আর কি! এছাড়া-
উপরে জ্বীন কী, এ অংশে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে যে, জ্বীন মানব আকৃতিতে থাকতে পারে। আর যখন সে মানুষ রূপে থাকবে, তখনতো তার সত্ত্বা ভিন্ন, এ কথা আপনি বলতে পারেন না।
এবং উপরে উল্লেখিত বিয়ে কী, এ অংশে লিখিত বিষয় সমূহ যদি পরিপূর্ণ ভাবে, জ্বীন নিজ থেকে মেনে নেয় বা মেনে নিতে পারে, তাহলে জ্বীনের সাথে মানুষের বিয়ে নাজায়েজ, এ কথা বলার বৈধ কোন যুক্তিতো আমি দেখি না।
আবু হোরায়রা (রাঃ) গঠনের দিক থেকে জ্বীনের সাথে মানুষের কোন তফাৎ দেখতে পাননি, এমনকি সে যে জ্বীন ছিলো (শয়তান), তা তিনি বুঝতেও পারেননি। জ্বীন মনূষ্য সমাজে, মানুষের সাথে বসবাস করতে পারে, যা উপরে হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণিত করা আছে।
সুতরাং উপর্যুক্ত আলোচনা হতে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, মানুষের সাথে জ্বীনের বিয়ে ও সহবাস জায়েজ। এতে শরিয়তের পক্ষ থেকে কোন বাধা নেই।
তবে যেহেতু মানব আকৃতিতে থাকা; এটি জ্বীনের বিকৃত রূপ, তাই মহিলা জ্বীনের ক্ষেত্রে, মানুষের আকৃতিতে থাকা কালীন সহবাসের কারণে শুক্রাণু ও ডিম্বানুর যে উন্নীতকরণ, মানুষ থেকে যখন অন্য আকৃতিতে জ্বীন পরিবর্তীত হবে, তখন এটি ডেমেজও হয়ে যেতে পারে; যেহেতু এটি জ্বীনের নিজস্ব অবয়ব ছিলো না। অতএব আমার আইডিয়া মতে, মানুষ এবং পরীর মিলনে যদি সন্তান লাভ করতে হয়, তাহলে ঐ পরীকে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়া পর্যন্ত মানব আকৃতিতেই থাকতে হবে এবং ভূমিষ্টকৃত এ সন্তানের থাকবে মানুষের বৈশিষ্ট্য, জ্বীনের নয়। অন্যদিকে জ্বীন যদি পূরুষ হয়, তাহলেও সন্তানের মাঝে মানুষের বৈশিষ্ট্যই হবে। আর এ ক্ষেত্রে পূরুষ জ্বীন, সহবাসের পর পর, রূপ পরিবর্তন করলেও কোন সমস্যা হবে না।
এ সবই আবার আমার ব্যক্তিগত আইডিয়া ছাড়া আর কিছু না।
তবে বিয়ে এবং সহবাস নাজায়েজ, এ কথার কোন ভিত্তি আছে বলে আমার মনে হয় না। তাই আমাদের কথা হলো জ্বীনের সাথে মানুষের বিয়ে জায়েজ।
তবুও আপনার কাছে যদি জ্বীনের সত্ত্বা বা বৈশিষ্ট্য ভিন্নই মনে হয়, তাহলে আপনি অবশ্যই কমেন্টস করে আমাদেরকে তা বুঝিয়ে দিবেন। তা না হলে কাল কেয়ামতে আপনাকে কেন আলেম বানানো হয়েছিলো, এ প্রশ্নের উত্তর হয়তোবা আপনাকে দিতে হবে। যেহেতু আমি আপনার নিকট জানতে চাচ্ছি ও আমার মাধ্যমে জাতিকে জানাতে চাচ্ছি। তবে অযথা কেউ পান্ডিত্য প্রকাশ করবেন না এবং অপ্রাসঙ্গিক ও অযুক্তিক জ্ঞান জাহির করা থেকে বিরত থাকবেন। এ আমার অনুরোধ।
হ্যাঁ, যদি সত্যিই জ্বীন ও মানুষের শারীরীক, মানসিক ও মৌলিক চারিত্রক বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হয়, তাহলে অবশ্যই জ্বীন ও মানুষের মধ্যেকার বিয়ে নাজায়েজ হবে।
আমি কিন্তু উপরোক্ত বর্ণনায় প্রমাণ করেছি যে, জ্বীন ও মানুষের মৌলিক সত্ত্বা ভিন্ন নয়, তাই তাদের মধ্যেকার বিয়ে জায়েজ এবং তাদের পরষ্পরের মাঝে ভালো কোন নিয়ত থাকলে, তবে তা সে অনুযায়ী আরো উত্তম হবে।
৮। রোকনের তুল্যমান বা পর্যায়ঃ
মানুষকে বাদ দিয়ে জ্বীনকে বিয়ে করতে হবে, কিংবা জ্বীনের জন্যেও জ্বীনকে বাদ দিয়ে মানুষকে বিয়ে করতে হবে; এর শরয়ী মান মুবাহ্ ছাড়া আর কিছুই হবে না।
তবে কোন প্রয়োজনীয়তাকে সামনে রেখে (দ্বীন বা দুনিয়ার) কেউ যদি এ কাজ করে, তবে তাদের নিয়ত ও সংশ্লিষ্ট কাজটির সাকসেস অনুযায়ী তারা সওয়াব প্রাপ্ত হবেন।
৯। যুক্তি খন্ডন ও বিপরীত যুক্তি প্রদানের আহবানঃ
যারা জ্বীনের সাথে মানুষের বিয়ে নাজায়েজ মনে করেন, তাদেরকে নিম্নলিখিত যুক্তি সমূহ খন্ডন বা এর বিপরীত যুক্তি প্রদান করতে আহবান জানাচ্ছিঃ-
১। কোরআনের কোন আয়াত দ্বারা কিংবা হাদীসের কোন বাণী দ্বারা জ্বীনের সাথে মানুষের বিয়ের বিষয়ে কোন ধরনের নিষেধাজ্ঞা না থাকায়, আমি এটিকে জায়েজ মনে করি।
২। অনেকে স্বত্ত্বা ও বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হওয়ার যুক্তি দেখিয়ে, এটিকে নাজায়েজ বলে। কিন্তু কিভাবে সত্ত্বা ও বৈশিষ্ট্য ভিন্ন তা আমি বুঝতে পাই না। জ্বীন মানুষের আকৃতিতে থাকতে পারে বলেই জ্বীনের সাথে মানুষের বিয়ের প্রশ্নটি উঠে এসেছে। এ দেশে অনেকেই পরী বিয়ে করতে চায় বা চেয়েছে। গুগলে গেলেই এটি সার্চ লিস্টে দেখতে পাওয়া যায়। যদি জ্বীনেরা মানুষের আকৃতি ধারন করতে নাই পারতো, তাহলে মানুষ এ প্রশ্নটি আলেমদেরকে করতো না। তাছাড়া জ্বীন-পরীরা যে মানবের বেসে, মনুষ্য সমাজে বসবাস করতে পারে, তা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যা উপরে উল্লেখ রয়েছে। অতএব আমার নিকট এটি জায়েজ বলেই সাব্যস্তকৃত।
৩। যে নবী (সাঃ) তাঁর উম্মতের জন্য এতো কিছু ত্যাগ করলেন, এতো কিছু শিক্ষা দিলেন; আর জ্বীনের সাথে মানুষের বিয়ে যদি নাজায়েজই হতো, তাহলে তিনি তাঁর উম্মতের জন্য তা স্পষ্ট করে বলে যেতেন। বিষয়টিতে হেকমত রেখে যেতেন না। তাই আমি ক্ষেত্র বিশেষে এটিকে জায়েজ মনে করি।
৪। ঈমাম শাফেয়ী (রহঃ) এঁর মাযহাবে জ্বীনের সাথে মানুষের বিয়েকে জায়েজ সাব্যস্ত করা হয়েছে। যার প্রমাণ উপরে আমি লিখেছি। যদি একেবারে হারাম বা মাকরূহে তাহরীমীই হতো, তাহলে উক্ত মাযহাব অনুযায়ী এটিকে জায়েজ করার কোন সুযোগই থাকতো না। কারণ মানুষের জন্য হারাম রূপে নির্ধারিত একটি কাজকে মাযহাব সৃষ্টিকারী একজন মুজতাহিদ ঈমাম জায়েজ বলবেন; এটি হতেই পারে না।
উপরে উল্লেখিত ৪টি বিষয়কে বিশ্লেষণ করে বা অন্য কোন পয়েন্ট থাকলে সে মতেও, কোরআন হাদীস দ্বারা, জ্বীন ও মানুষের মধ্যেকার বিয়ে নাজায়েজ প্রমাণিত করার জন্য আপনাদের প্রতি আমার বিনীত আহবান রইলো। আপনাদেরকে মহান রব আলেম বানিয়েছেন শুধু মুখে তালা দিয়ে বসে থাকার জন্যে নয়। বা শুধু কিতাব দেখিয়ে বা অতীত বুজর্গ কর্তৃক প্রদান করা ফতোয়া হুবহু আওডানোর জন্য নয়।
আপনাদের প্রতি আমাদের বিশেষ অনুরোধ এই যে, আপনারা আমাদেরকে বুঝাবেন, এটি কিভাবে নাজায়েজ।
১০। জ্বীন ও মানুষের মধ্যেকার বিয়ের উপকারীতাঃ
জ্বীন মানুষের চাইতে শারীরিক দিক থেকে অনেক শক্তিশালী। এবং জ্বীনকে খনিজ সম্পদের মতোই মনে করা হয়। দুষ্ট জ্বীনের প্রভাবে মানুষ অনেকগুলো জটিল ও কঠিন রোগে ভূগছে। জ্বীন দেখা যায় না। আর মানুষদের একাংশ অদেখা কিছুতে বিশ্বাস করেনা। এছাড়া মহান রবের সৃষ্টি রহস্য উদঘাটনে প্রচেষ্টা চালানো, মুসলিমদের ঈমানী দায়িত্ব।
এ সব কিছু সমাধানের উদ্দেশ্যে (আরো নেক নিয়তে), কোন মুমিন জ্বীন যদি, কোন মুমিন মানুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তবে এতে মানুষ ও জ্বীন, এ উভয় জাতির প্রভূত মঙ্গল হবে বলে মনে করি এবং উভয়ের ও যারা এ বিষয়টি সাপোর্ট বা সহযোগিতা করে তাদের, অনেক অনেক সাওয়াব প্রাপ্তিরও আশা রাখি।
যেমন জ্বীন বা পরী যদি বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে বা অন্য যে কোন বৈধ সূত্রে কারো কাছে প্রকাশ্যে আগত হয়, ও মানুষের পাশাপাশি, মানুষের সাথে মিলেমিশে বসবাস করতে চায়, তাহলে মহা বিজ্ঞানী মহান রাব্বুল আলামিন কেমন করে, আজব, শক্তিধর ও বিজ্ঞানময় এক সৃষ্টি (জ্বীন), সৃষ্টি করলেন, তা সকলেই প্রত্যক্ষ করতে পারতো। কেমন করে, ধরুন একটা জল-জ্যান্ত মানুষ (মানুষরূপী জ্বীন), সকলের সামনে গরু হয়ে গেলো, আবার উট হয়ে গেলো, আবার পাখি হয়ে গেলো, আবার শূন্যে মিলিয়ে গেলো; এসব যদি বিজ্ঞানীরা (বা সাধারণ মানুষও) অবলোকন করে, তাহলে অবশ্যই তারা আরো ভালো করে আল্লাহর পরিচয় পাবে এবং কিছু মানুষ স্বীকার করতে বাধ্য হবে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহু তা'য়ালা রয়েছেন। এমনিতেতো অনেক বিজ্ঞানী জ্বীনকেই বিশ্বাস করে না। আবার জ্বীন কী পারে, আর কী পারে না, বা পারলেও কতটুকু করতে পারে; মানে করতে পারে না বা করার অর্ডার বা বৈধতা পায় না (যদি এমনটি হয় বা ঘটে); এ সব কিছু পরিষ্কার হতো! যেহেতু জ্বীন নিয়ে রয়েছে মানুষের এক অপূর্ণাঙ্গ জ্ঞান। আবার জ্বীনের মতোই ফেরেশতাদেরকেও মানুষ দেখতে পায় না, এবং আল্লাহকেও দেখতে পায় না। দুনিয়ায় এ সব যে রয়েছে, তা ঈমানের মূল অংশ। সুতরাং জ্বীন বা পরী (মহিলা জ্বীন) যদি প্রকাশ্যে ওপেন হতো, তাহলে মানুষের ঈমানের মূল হিসেবে এ সব কিছু বিশ্বাসেও তা অনেক অনেক সহায়ক হতো।
একটা বিষয় চিন্তা করেছেন, আল্লাহু তা'য়ালা, তাঁকে যারা মানে না; তাদেরকে কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি দিবেন। কিন্তু কারো প্রচেষ্টায় যদি জ্বীন জাতিকে জন স্বম্মুখে তাদের বৈশিষ্ট্য সহ নিয়ে আসতে পারতো; তবে মানুষ তাদেরকে বা তাদের জ্ঞান, শক্তি ও বিভিন্ন উপকারিতা বা কারিষ্মা দেখে; এবং তারা যখন বলতো আল্লাহু তা'য়ালাই আমাদের সৃষ্টিকর্তা; তখন হয়তো অনেকে মহান রবের প্রতি ঈমান আনতো! আর এতে আগুন থেকে কিছু মানুষ বেঁচে যেতো। এ সব কি মুমিন জ্বিনকে বিয়ে করার শ্রেষ্ঠতম উপকারীতা নয়?
(সাঃ) মহান আল্লাহু তা'য়ালা কাউকে না কাউকে এ সব নেক নিয়তে জ্বীনকে বিয়ে করার মাধ্যমে বা অন্য কোন বৈধ সূত্রে জ্বীনকে ওপেন ভাবে নিয়ে আসার তাওফিক দান করুক। অথবা আল্লাহু তা'য়ালা নিজ গুনে তাঁর সৃষ্ট এ জীবকে বৈবাহিক সূত্রে বা অন্য যে কোন বৈধ সূত্রে, মানুষের সাথে প্রকাশ্যে বসবাসের মাধ্যমে তাদের বৈশিষ্ট্য মানুষের মাঝে ওপেন করার ব্যবস্থা করুক। যাতে মানুষেরা আরো ভালো করে আল্লাহর পরিচয় পায় এবং তাদের ঈমান আনতে যাতে আরো সহজ হয়। সে সাথে ঈমানদার মানুষেরা যাতে, কোনটি জায়েজ, আর কোনটি নাজায়েজ, তা আরো ভালোভাবে বুঝতে পায় এবং তারা যেন জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রতিরক্ষায় আরো সমৃদ্ধ হয়। (সাঃ)
আপনারা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, এ বিয়ের মাধ্যমে মানুষ ও জ্বীন জাতির অনেক জ্ঞানের দ্বার ও চিকিৎসা বিজ্ঞান উন্মোচিত হতে পারে। ইসলামী শরিয়তের অনেক মাসআলা মাসায়িলের পূর্ণতা আসতে পারে। সর্বোপরি এতে অনেকগুলো মানুষ ঈমান আনতে পারে বা দূর্বল ঈমানদারদের ঈমানে পূর্ণতা আসতে পারে এবং মানুষ ও জ্বীন জাতিকে মহান রবের এবং তার সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্যের পরিচয় প্রদানে ও বিভিন্ন দিক দিয়ে ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেক অনেক কল্যাণ হতে পারে।
১১। সতর্কতা ও পরামর্শঃ
মানুষ এবং জ্বীন উভয়ের মধ্যেই দুষ্ট এবং ভালো দু'টিই রয়েছে। আবার বিয়ে কখনো জোর-যবরদস্তির বিষয় নয়।
অতএব কেউ যদি তদবীর করে বা যে কোন ভাবে বাধ্য করে বা কোন দুষ্ট জ্বীনের সাথে বা কোন দুষ্ট মানুষের সাথে পরষ্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তবে এতে উভয়ই সমূহ ক্ষতির সম্মুখিন হতে পারেন। তাই জ্বীন যদি নিজ থেকে কোন মানুষকে আহবান না করে বা জ্বীনকে যদি ভালো ও মুমেন বলে না হয়, তাহলে মুসলমানদের পরীকে বা জ্বীনকে বিয়ে করতে চাওয়ার কোন মানে নেই। এবং এটি তার জীবনে অনেকটাই কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অতএব আমার পরামর্শ হচ্ছে এভাবে কেউ কাউকে বিয়ে করতে চাইবেন না।
আর ভালো দিক বিবেচনা করে, ভাল কিনা যাচাই করার পর, ভালো বলে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরেও যদি কেউ বিয়ে করেন, তাকে অবশ্যই শুধু শরিয়ত সম্মত ভাবেই বিয়ে করতে হবে।
১২। অবস্থা/প্রেক্ষাপট/শানে নজুলঃ
২০০১ সনে কলাগাছিয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, বন্দর, নারায়নগঞ্জ, এ স্কুলে শিক্ষকতা করা কালীন আমার শরীরে জ্বীন ভর/আছর করে। সে থেকে আজ প্রায় ২৫ বছর, এ জ্বীন আমার শরীর থেকে কোনদিকে যায়নি এবং একটি বারের জন্য আমার সাথে ওপেনও হয়নি। কেবল আমার শরীরে সাহর করে ছিল এবং এখনো আছে। যা আমার এলাকাবাসী ও পরিচিতজন ব্যক্তিবৃন্দগণ জানেন।
প্রথমে ওকে তাড়াতে গিয়ে এবং পরে তার পরিচয় দিতে গিয়ে, এখন আমি প্রায় নিঃস্ব, ইয়াতিম এবং প্রচন্ড ভাবে জুলুমের শীকার।
আপনারা jinmanb.blogspot.com এখানে ক্লিক করে এ বিষয়ে আরো জানতে পারেন।
আমার মনে হচ্ছে ও মুমেনা মহিলা জ্বীন। তাই যেহেতু সে মুসলিম, তাই হয়তো আমাকে নিয়ে ওর রয়েছে হয়তোবা কোন ধরনের সৎ পরিকল্পনা।
আর এ জন্যে আমার মনে হয় আমাদের কাছে ও ওপেন হতে প্রয়োজন শরয়ী বৈধতার। যা বর্তমানে অনেকে নাজায়েজ মনে করছেন।
কিন্তু আমরা মুসলিম; আমরা নাজায়েজ কাজ করতে পারি না। আর যদি জায়েজ হয়, তাহলে মাসআলার মারপ্যাঁচে আমরা কেন আঁটকে থাকবো এবং শরিয়তের মধ্যে কেন মিথ্যা তোহমত লাগিয়ে আমাদেরকে বাধাগ্রস্থ করে রাখা হবে ও সমাজের মধ্যে আমাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করে রাখা হবে।
তাই এ জ্বীন সদস্য যাতে আমার নিকট মানব হিসেবে আসেন এবং তার যদি কোন ভালো মানসিকতা থাকে, তবে বিয়ের মতো একটি বৈধ ও দৃঢ় বন্ধনে সে যেন আবদ্ধ থাকতে পারে, এরই প্রচেষ্টা হিসেবে, আজকের এ রিভিউ মাসআলাটি লিখা।
অনেকে মনে করতে পারেন, জ্বীন দ্বারা তদবীর করবো, হাজিরা মিলাবো, চিকিৎসা করবো, দ্বীন প্রচার করবো,এবং এভাবে টাকা ইনকাম করবো; ভাই আমার মূল উদ্দেশ্য টাকা ইনকাম নয়; কোরআনের আয়াত যে সত্য, পবিত্র কোরাআনে বর্ণিত অদেখা বিষয়ে বিশ্বাস করার কিছু বিষয় স্পষ্ট করে দেখানো; চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে মানুষকে জটিল ও কঠিন রোগের সেবা প্রদান, জ্বীনের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে মজলুমদেরকে হেফাজত করা ও মুসলমানদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার এবং এর মাধ্যমে ঈমান আনয়নের বিষয়ে, অবিশ্বাসীদের বিশ্বাস করতে সহজীকরণ করা; এটিই আমার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
তবে সে যদি স্ব-শরীরে আসে, তাহলে তার সাথে আলোচনা করেই ঠিক করবো, আমরা কী করবো বা কী করা যেতে পারে!
আবার অনেকে মনে করতে পারেন, ইত্যাদির প্রয়োজনে আবার বিয়ে কেন? বিয়ের প্রয়োজন কী? বিয়ের সাথে এসবের সম্পর্ক কী?
দেখুন, এ জ্বীনটি আমার শরীরে ভর করেছে আজ প্রায় ২৫ বছর, এ ২৫ বছরে আলহামদুলিল্লাহ অনেকটাই আল্লাহমুখী হয়েছি। এবং আপনি আমার সমাজে আমাকে নিয়ে গবেষণায় নামুন; আলহামদুলিল্লাহ, আমরা উভয়ে যে আল্লাহমুখী, এটি প্রমাণিত হয়েছে বা হবে ইনশা'আল্লাহ!
সে হিসেবে আল্লাহর আইনে উভয়ের যাতে একটা শক্ত বাইন্ডিং থাকে, যাতে আমাদের পরষ্পরের একটি আন্তরিক বন্ধুত্বপূর্ণ দৃঢ় বন্ধন থাকে, যাতে হঠাৎ করে এবং সামান্য কারণে আমাদের বিচ্ছেদ না হয়, যাতে জ্বীন কর্তৃক যে সার্ভিস দেয়া হয় বা দেয়া হতে পারে, তা যেন যথাযথ হয় এবং আমাদের কারো যেন বেপর্দার গুনাহ না হয় ও সহজ সাবলীল ভাবে যাতে যে কোন সার্ভিস দেয়া যায়; জ্বীনের জীবন প্রক্রিয়া এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাইডে যাতে নতুন নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়; আবার দু'টি ভিন্ন জেন্ডার পর্দা বিহীন একই স্থানে অবস্থান করলে যিনার গুনাহ্ হতে পারে বা যিনাহ্ও হয়ে যেতে পারে বা পর্দা মানলেও একটা মানসিক যন্ত্রণা হতে পারে, এসব থেকে মুক্তি পাওয়া; পরী বিয়ে করতে চাওয়ার সংক্ষিপ্ত বিবরণ আমার এ রকম।
আমার এ পরীর বিষয়ে (ধারনা মতে), আপনাদের নিকট করজোড়ে একটি বিষয়ে, চিন্তা করতে না করবো, না হয়, হয়তো সে জীবনেও ধরা দিবে না; ওকে আমি সুন্দর, এ জন্য বা সেক্সুয়াল কোন প্রয়োজনে আমার উপর ভর করেছে, এটা ভাববেন না। কারণ ও আমার নিকট এসেছে আজ প্রায় ২৫ বছর আগে ২০০১ সনে। আজ ২০২৫। এ দীর্ঘ সময়ে যদি তার এ ধরনের কোন কূ-মানসিকতাই থাকতো, তাহলে নিঃসন্দেহে, তা সে বাস্তবায়ন করতে চাইতো; এতো আল্লাহ্ আল্লাহ্ করতো না।
অপরদিকে আমিও এ পর্যন্ত অনেক মহিলার কূ-প্রস্তাব ফেলে নিজের বউটার কাছেও দিনের পর দিন, এভাবে না গিয়ে থাকতে পারতাম না। সব মিলিয়ে পরীকে বিয়ে করতে চাওয়ার পিছনে আমাদের উভয়েরই রয়েছে ভালো উদ্দেশ্য। যা আমার বিশ্বাস হয়েছে।
তাই আপনাদের প্রতি সবিনয় অনুরোধ, এ বিষয়ে আমাদের কাউকে খারাপ বা অসম্মানের দৃষ্টিতে দেখবেন না।
১৩। পরিশেষঃ
পোস্টটি পাবলিশের পর ১০ দিন পার হলেও, এ পোস্ট সম্পর্কে এখনো কোন নেগেটিভ কমেন্টস না পড়ায়, মাসআলাটি, ফতোয়ায়ে আরিফ কিতাবের ২য় ধাপের অফলাইন মিটিংয়ে প্রেরণ করা হলো। আপনারা এখানে ক্লিক করে ২য় ধাপের এজেন্ডা সমূহ দেখতে পারেন।
এছাড়া মনে রাখবেন, বিয়ে করতে চাওয়া বা অন্য যে কোন সূত্রে তাকে মানুষের বেসে মানুষের পাশাপাশি নিয়ে আসাই আমার একটি উদ্দেশ্য হলেও, এটিই আমার প্রধান উদ্দেশ্য নয়! আমার প্রধান উদ্দেশ্য গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, পবিত্র কোরআন শরীফে যদি জ্বীনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েজই হয়; তবে সেটি নাজায়েজ থাকবে কেন? এ মাসআলাটি যাতে পরিষ্কার হয়। জ্বীনের সহযোগিতায় যাতে ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরো মজবুত হয়। মজলুম জনতা যাতে জুলুম থেকে রক্ষা পায় এবং চিকিৎসা সেবা প্রদানে যাতে মুসলমানেরা আরো এগিয়ে যেতে পারে। ইত্যাদি হচ্ছে আমার প্রধান প্রধান উদ্দেশ্য।
সকলে ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
এ পোস্ট এর ট্যাগ সমূহঃ মানুষ ও জ্বীনের মধ্যে বিয়ে জায়েজ (রিভিউ), জ্বীনকে বিয়ে করা জায়েজ কিনা, পরী বিয়ে করা জায়েজ, marriage pori


0 Comments